সেদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা জেনে নেয়ার পূর্বে আমাদের এটাও জেনে রাখা প্রয়োজন যে, একটি সেদ্ধ ডিমের মধ্যে কি কি পুষ্টি উপাদান থাকে।
সেদ্ধ ডিমের গুণাগুণ বা ডিমের পুষ্টি উপাদান
একটি ১০০ গ্রাম ওজনের সেদ্ধ ডিমের মধ্যে যেসব পুষ্টি উপাদান রয়েছে তার তালিকা নিচে দেয়া হল-
- ১৫০-১৫৫ ক্যালরি
- শর্করা রয়েছে ১.২ গ্রাম
- স্নেহ রয়েছে ১০.৬ গ্রাম
- প্রোটিন রয়েছে ১২.৬ গ্রাম
- ভিটামিন বি১ বা থায়ামিন রয়েছে ০.০৬৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্লাভিন রয়েছে ০.৫ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম রয়েছে ৫০ মিলিগ্রাম
- লোহা রয়েছে ১.২ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে ১০ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস বিদ্যমান ১৭২ মিলিগ্রাম
- পটাশিয়াম বিদ্যমান ১২৬ মিলিগ্রাম
- দস্তা বা সিলভার রয়েছে ১ মিলিগ্রামএছাড়াও রয়েছে আরও অনেক উপাদান। উল্লেখযোগ্য উপাদান গুলোই উপরে তুলে ধরা হয়েছে। সেদ্ধ ডিমের গুণাগুণ কিংবা সেদ্ধ ডিমের পুষ্টি উপাদান তো জেনে নেয়া হল।
আসুন তাহলে এখন জেনে নেয়া যাক সেদ্ধ ডিমের উপকারিতা অর্থাৎ সেদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা।
১. শরীরে শক্তির যোগান দেয়
সুস্থ থাকতে এবং প্রতিদিনের কাজকর্ম ঠিকঠাক ভাবে করার জন্য একজন মানুষকে শক্তিশালী হতে হবে। মাথায় রাখা জরুরী, দুর্বল শরীর নিয়ে শারীরিক পরিশ্রম কিংবা মানসিক পরিশ্রম কোনটাই ভালোভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়।
ডিমের মধ্যে বিদ্যমান আমিষ বা প্রোটিন আপনাকে সে শক্তি প্রদান করবে। শারীরিক পরিশ্রমের জন্য পেশীর এক্সট্রা শক্তি প্রদান করবে ডিম। সেদ্ধ ডিমের উপকারিতা গুলোর মধ্যে শরীরে শক্তি প্রদান করে এবং পেশীকে মজবুত করে।
২. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে
মানব শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি অঙ্গ হচ্ছে চোখ। এই চোখ দিয়েই আমরা সুন্দর পৃথিবীটাকে দেখতে পাই। তাই চোখের যত্ন নেয়াটা কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
চোখ বন্ধ করে একবার ভাবুন, চোখের দৃষ্টিশক্তি না থাকলে কী অবস্থা হত! আসলেই তাই, অনেক ভয়াভহ অবস্থা হতো। যা একজন দৃষ্টিশক্তিহীন মানুষই বলতে পারবে তার চোখ না থাকার বেদনা।কথা হচ্ছে ডিমের উপকারিতা নিয়ে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, ডিমের মধ্যে কি আছে যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করবে?
ডিমের মধ্যে রয়েছে লুয়েটিন, শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বা ভিটামিন ই, জিয়েক্সসেনথিন ছাড়াও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
খালি পেটে ডিম খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এছাড়াও সেদ্ধ ডিম খেলে চোখে ছানি পড়া রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।
চোখের রেটিনার নাম তো আমরা অনেকেই জানি, প্রতিদিন একটি সেদ্ধ ডিম খেলে চোখের রেটিনা তরতাজা থাকে এবং কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
৩. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
প্রশ্ন আসতেই পারে ডিম কিভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে? মনের ভেতরে এমন প্রশ্ন আসাটা অনেক স্বাভাবিক।
ডিম ক্যান্সার প্রতিরোধ করে কারণ ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই অর্থাৎ অ্যান্টিওক্সিডেন্ট যা মানব শরীরের ভিতরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্রি র্যাডিক্যাল ধংশ করে দেয়। পাশাপাশি নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে। শরীরের ভিতরের এই ফ্রি র্যাডিক্যালই মূলত ক্যন্সার সৃষ্টি করে একসময়। মেয়েদের অ্যাডোলেশন পিরিয়ডে নিয়মিত ডিম খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
মাথায় রাখা জরুরী, সেদ্ধ ডিমের উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম, তাই প্রতিদিন সকাল বেলা খালি পেটে একটি সেদ্ধ ডিম খাওয়া উচিৎ।
৪. চুল পড়া রোধ করে
আজকাল চুল পড়া একটি কমন সমস্যা হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারে। চুল পড়ার অনেক গুলো কারণের মধ্যে একটি প্রধান কারণ হচ্ছে সালফার, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন এ এর অভাব।
ডিমের মধ্যে প্রচুর সালফার, ভিটামিন এ এবং ই থাকায় চুল পড়া রোধে বেশ সহায়তা করে। শুধু চুল পড়াই রোধ করে না পাশাপাশি চুল বৃদ্ধিতেও বেশ সহায়তা করে।
৫. মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
সেদ্ধ ডিমের উপকারিতা অর্থাৎ সকালে একটি করে সেদ্ধ ডিম খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে একটি প্রধান উপকারিতা হচ্ছে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরী যে, হাফ বয়েল ডিমের উপকারিতা বেশি পুরোপুরি সেদ্ধ ডিমের উপকারিতার থেকে। তাই উচিৎ হবে হাফ বয়েল ডিম খাওয়া।একটা প্রশ্ন তো আসতেই পারে, ডিম খেলে কিভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়? সাধারণত মস্তিষ্কের পাওয়ার বৃদ্ধি করে থাকে কোলিন নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
ডিমের মধ্যে কোলিন উপাদানটি উপস্থিত থাকায় প্রতিদিন ডিম খেলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে হাফ বয়েল ডিম খাওয়ার উপকারিতা তুলনামূলকভাবে বেশি।
মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি হলে কি কি উপকার পাওয়া যায়? সহজ উত্তর, মস্তিস্ক বেশি বেশি কাজ করা শুরু করলে ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে পাশাপাশি বৃদ্ধি পাবে কাজের প্রতি মনোযোগ।
শরীরে যদি কোলিন উপাদানটির ঘাটতি দেখা দেয় তবে Dementia ও Alzheimer’s Disease সহ নানা ধরণের মস্তিস্কের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
৬. হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখে
আমাদের শরীরের কিছু ভাইটাল অরগ্যান আছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হার্ট বা হৃদযন্ত্র। হৃদপিণ্ডের প্রধান কাজ হচ্ছে সারা শরীরে রক্ত চলাচলে সাহায্য করা।
ডিমের মধ্যে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে যা রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না ফলে হার্ট তার কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারে, অর্থাৎ সারা শরীরে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।
৭. কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
আমারা অনেকেই জানি, মানব শরীরে দুই ধরণের কোলেস্টেরল থাকে। একটি শরীরের জন্য ভালো এবং অপরটি খারাপ। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই এই দুই কোলেস্টেরলের মধ্যে এটা ব্যাল্যান্স রাখা জরুরী।
ডিম নিয়ে আমরা অনেকেই একটা খারাপ ধারণা পোষণ করে থাকি। ডিম খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ইতিমধ্যে একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ডিমের মধ্যে থাকা ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরলই ভালো কোলেস্টেরল যা মানব শরীরের জন্য উপকারী।
হাফ বয়েল ডিমের উপকারিতার কথা যদি বলতেই হয় তবে প্রতিদিন একটি করে হাফ বয়েল ডিম খেলে শরীরের মধ্যে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাবে এবং খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যাবে।
৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
হাফ বয়েল ডিমের উপকারিতা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি উপকারিতা হচ্ছে, প্রতিদিন একটি করে হাফ বয়েল ডিম খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। প্রশ্ন আসতে পারে, কিভাবে?
ডিমের মধ্যে থাকা জিংক এবং সেলেনিয়াম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি থাইরয়েড নামক হরমোন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে।
থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ পর্যাপ্ত হওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরণের সংক্রমণ বা ইনফেকশন এবং থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেয়।
৯. অ্যামাইনো এসিডের অভাব দূর করে
অ্যামাইনো এসিড এমন একটি প্রয়োজনীয় উপাদান যা শরীরকে সতেজ রাখতে বা সচল রাখতে সাহায্য করে। শরীরে অ্যামাইনো এসিডের ঘাটতি হয়ে গেলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই শারীরিক দুর্বলতা দূর করতে অ্যামাইনো এসিডের প্রয়োজন হয়, আর ডিমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যামাইনো এসিড। প্রতিদিন একটি করে সেদ্ধ ডিম খেলে অ্যামাইনো এসিডের ঘাটতি দূর করা সম্ভব।
শরীরে অ্যামাইনো এসিডের ঘাটতি পূরণের ক্ষেত্রে হাফ বয়েল ডিমের উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়।
১০. শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে দেয়
আমাদের অনেকের মাঝে একটা ভুল ধারণা আছে যে ডিম খেলে শরীরের ওজন বাড়ে। প্রকৃতপক্ষে এ ধারণা একেবারেই মিথ্যে।
ডিম সরাসরি শরীরের ওজন কমায় না। তাহলে ডিম কিভাবে শরীরের ওজন কমায়? এখানে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সকালে খালি পেটে ডিম খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে।যদি কেউ সকালে খালি পেটে একটি ডিম খায় তবে বেশ কিছু সময় খাওয়ার চাহিদা থাকে না অর্থাৎ কিছু সময় না খেয়ে থাকা যায়।
ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রয়োজন হয় না এবং শরীরে অতিরিক্ত চর্বিও জমে না। ফলে শরীর মোটা হয় না এবং ওজন কমে যায়।
এভাবে বেশ কিছুদিন চলতে চলতে থাকলে শরীরের ওজন অনেকটাই কমে যায় স্বাভাবিকভাবেই। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, সকালে যদি ক্যালরির চাহিদা পূরণ করা হয় তবে সারাদিনে ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে অনীহা থাকে।
১১. স্ট্রেস কমিয়ে দেয়
স্ট্রেস এখন একটি কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবসাদ অনিহা মানসিক অসুস্থতা ইত্যাদি তিলে তিলে ধংশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবনকে। সেদ্ধ ডিমের উপকারিতা অনেক তারমধ্যে একটি হচ্ছে স্ট্রেস কমিয়ে দেয়।
একটি ডিমে প্রায় ৯ ধরণের অ্যামাইনো এসিড থাকে যা সেরাটোনিন নামক হরমোন নিঃসরণে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
এই সেরাটোনিন হরমোনটিই মূলত স্ট্রেস এবং আংজাইটি কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া উচিৎ।
১২. পেশী মজবুত করে
বর্তমান যুগে ছেলেদের পেশী তৈরির প্রতি মনোযোগ অনেক বেশি। প্রতিদিন নিয়ম করে তারা জিমে যাচ্ছে। কিন্তু শুধু জিমে গেলে কিংবা নিয়মিত ব্যায়াম করলেই পেশী মজবুত হয় না।
তাহলে উপায়?
নিয়মিত জিমের পাশাপাশি ভারসাম্য খাবার গ্রহণ করতে হবে। আর এই খাবারগুলোর গুলোর মধ্যে হাফ বয়েল ডিমের উপকারিতা অনেক বেশি।
হাফ বয়েল ডিম খেলে পেশী মজবুত হওয়ার কারণ হচ্ছে ডিমে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন রয়েছে, তাই শরীরে শক্তির যোগান দিতে পারে খুব তারাতারি। এর সাথে পেশীর ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে।
১৩. শরীরের হাড় মজবুত করে
ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি রয়েছে, আর আমরা অনেকেই জানি ভিটামিন ডি হাড় শক্ত ও মজবুত রাখে।
নিয়মিত ডিম খেলে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায় বলা চলে দাঁত নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। এছাড়াও ডিম হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১৪. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
ডিমের গুণাগুণ থেকে আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি যে ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই থাকে। এই ভিটামিন ই মূলত ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
এছাড়াও ডিমে রয়েছে বিভিন্ন খনিজ উপাদান যা চুল পড়া কমায় এবং ত্বক সতেজ রাখতে সাহায্য করে।ডিম খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম একটি উপকারিতা, তাই ত্বক এবং শরীর ফিট রাখতে সকালে খালি পেটে একটি ডিম খেলে মন্দ হয় না।
১৫. শরীরে রক্ত স্বল্পতা দূর করে
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে ৪.৫ থেকে ৫.৫ লিটার রক্ত থাকা প্রয়োজন। প্রাণীর শরীরে রক্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে।
তারমধ্যে প্রধান প্রধান কাজ হচ্ছে, শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন এবং খাবার সরবরাহ করা, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখা ইত্যাদি।
মানব শরীরে রক্তের পরিমাণ যদি কমে যায় তবে তাকে বলা হয়ে থাকে রক্ত স্বল্পতা বা রক্ত অল্পতা। এ থেকে অ্যানিমিয়া ও হতে পারে।
ডিমে ভিটামিনের ভরপুর উপস্থিতি থাকায় প্রতিদিন একটি করে হাফ বয়েল ডিম খেলে রক্ত স্বল্পতা বা রক্ত অল্পতা দূর করা সহজেই সম্ভব হয়। সাথে অ্যানিমিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়।
কাঁচা ডিমের উপকারিতা
সেদ্ধ ডিমের উপকারিতা এবং হাফ বয়েল ডিমের উপকারিতা তো আমরা জেনেই নিলাম। অনেকেই বলে থাকেন কাঁচা ডিম খাওয়ার উপকারিতা সবচেয়ে বেশি।
সত্যি কথা বলতে এই ধারণা একেবারেই ভুল। কাঁচা ডিম খাওয়ার উপকারিতা আছে এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিকভাবে কোন ব্যাখ্যা নেই। বরং কাঁচা ডিম খেলে নানা ধরণের রোগ হতে পারে।
এটা সত্য যে, কাঁচা ডিমে সব ধরণের ভিটামিনের মান অক্ষুণ্ণ থাকে এবং সেদ্ধ করা ডিমে ভিটামিন গুলোর মান কিছুটা কমে যায়। তবে খুব কম পরিমাণে নষ্ট হয়।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা ডিমের তুলনায় সেদ্ধ ডিম বা ভাজি ডিম খুব তারাতারি হজম হয়, তাই শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী।
গবেষণায় দেখা গেছে, একটি কাঁচা ডিম থেকে ৩ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় যা হজমযোগ্য অপরদিকে একটি সেদ্ধ ডিমে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায় যা সহজেই হজম হয়।
আরও একটি উদাহরন দেয়া যেতে পারে, একটি কাঁচা ডিমে ভিটামিন বি৬ পাওয়া যায় ০.০৮৫ মিলিগ্রাম, চেলিন পাওয়া যায় ১৪৬.৯ মিলিগ্রাম। অপরদিকে একটি সেদ্ধ ডিমে ভিটামিন বি৬ পাওয়া যায় ০.০৭২ মিলিগ্রাম, এবং চেলিন পাওয়া যায় প্রায় ১১৭ মিলিগ্রাম।
উপরের ডাটাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, কাঁচা ডিমের উপকারিতা এর থেকে সেদ্ধ ডিমের উপকারিতা বেশি পাশাপাশি হজমেও কোন প্রকার সমস্যা দেখা দেয় না। তবে ভিটামিন বি৬ এবং চেলিন খুব সামান্য পরিমাণ কমে যায়।
কাঁচা ডিম খাওয়ার উপকারিতা তো কিছু আছেই তবে অপকারিতাই বেশি। কারণ, কাঁচা ডিমে স্যালমোনেলা নামে একটি ব্যাকটেরিয়া থাকে যার কারণে বদহজম বা খাদ্যে বিষক্রিয়া ঘটায়।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, কাঁচা ডিম খেয়ে অ্যামেরিকায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ ফুড পয়জনিং এর স্বীকার হন।
সুতরাং বলা যেতে পারে কাঁচা ডিম খাওয়ার উপকারিতা থাকলেও অপকারিতাই বেশি। তাই হাফ বয়েল ডিম কিংবা পুরো সেদ্ধ ডিম খাওয়া উচিৎ।
ডিমের অপকারিতা বা অতিরিক্ত ডিম খাওয়ার অপকারিতা
ডিম খাওয়ার উপকারিতার পাশাপাশি ডিমের অপকারিতা বা ডিম খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে। যদিও ডাক্তার ডিম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তবে তা প্রতিদিন একটি করে।
উপরে আমরা জানলাম ডিমের উপকারিতা। আসুন এবার জেনে নেই, ডিমের অপকারিতা কি?
১. হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
বর্তমানে বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এ খবর আমাদের অজানা নয়। অতিরিক্ত মাত্রায় ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
এর কারণ হচ্ছে, অতিরিক্ত ডিম খাওয়ার ফলে শরীরে ভালো খারাপ দুই ধরণের কোলেস্টরেলের মাত্রাই বৃদ্ধি পায়। যা হৃদরোগের অন্যতম কারণ।
তাহলে উপায়, উপায় আছে, পরিমিত ডিম খেতে হবে। পরিমিত বলতে সপ্তাহে ৩-৪ দিন একটি করে ডিম খেতে পারেন তবে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকবে না।
কিন্তু যারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন যে তার হৃদরোগ আছে, তাহলে তার জন্য ডিম খাওয়া একেবারেই উচিৎ হবে না। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাওয়া যেতে পারে।
২. আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়
পরিমিত ডিম খাওয়ার উপকারিতা থাকলেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিনিয়ত ডিম খাওয়ার ফলে আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এটি মূলত অতিরিক্ত ডিম খাওয়ার ফলে বেশি হতে পারে।
আমরা অনেকেই ধারণা করে থাকি যে, ডিমের সাদা অংশ শরীরের জন্য উপকারী এবং ডিমের কুসুম শরীরের জন্য ভালো নয়।
এই ধারণাও পুরোপুরি ভুল। ডিমের সাদা অংশ হোক কিংবা ডিমের কুসুমই হোক অতিরিক্ত কোনটাই শরীরের জন্য ভালো না।
৩. খাবারে বিষক্রিয়া
আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি যে, ডিমের মধ্যে এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া থাকে যাকে সালমোনেলা নামে নামকরন করা হয়েছে।
কাঁচা ডিম খেলে মূলত এই ব্যাকটেরিয়া খাবারে বিষক্রিয়া ঘটায়। এজন্য কাঁচা ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরী, যদিও কাঁচা ডিমে ভিটামিনের পরিমাণ সামান্য বেশি থাকে।
ডিমের উপকারিতাগুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যায় উপকারের পরিমাণ বেশি। আবার ডিমের অপকারিতাগুলোর দিকে নজর দিলে দেখা যায় খুব অল্প পরিমাণ অপকারিতা রয়েছে।
একটা কথা মাথায় রাখা জরুরী, অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না, হোক তা ডিম খাওয়া নতুবা অন্যকিছু।
ডিমের উপকারিতা অনেক তাই পরিমিত ডিম খাওয়া প্রয়োজন। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করে আজ এ পর্যন্ত। লেখাটি ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং আপনার কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ!