ভোরে ঘুম থেকে উঠার উপকারিতার কথা বর্তমান যুগে আমরা অনেকেই জানি না। উত্তম বা ভালো অভ্যাসগুলোর মধ্যে সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা অন্যতম।
আসুন জেনে নেই, সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতা।
১. বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণের সুযোগ
শহরে যারা বসবাস করেন তাদের বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণের সুযোগ নেই বললেই চলে। কারণ সারাদিনে যে পরিমাণ গাড়ি চলাচল করে তাতে বিশুদ্ধ বাতাসের চিন্তাও করা যায় না।
তবে হ্যাঁ আপনি যদি খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেন অথবা উপসানালয়ে গিয়ে প্রার্থনা করেন তবে বিশুদ্ধ অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারেন, পাশাপাশি শরীর চর্চাও হয়ে যাবে।
এর কারণ হচ্ছে, রাতের বেলায় মানুষের চলাচল থাকে না এবং খুব কম সংখ্যক গাড়ি চলাচল করে তাই বাতাসে ধুলোবালি অনেকটাই কমে যায়।
২. মানসিক সুস্থতা
যারা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারেন না তাদের মাঝে এক ধরণের মানসিক অস্থিরতা কাজ করে। কাজের তাড়া আপনা থেকে বেড়ে যায় ফলে মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করে থাকেন।
যদি ভোরে ঘুম থেকে উঠেন তাহলে কাজের তাড়া আপনা থেকেই কমে যাবে এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন।একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেন তাদের মানসিক চাপ অনেক কমে যায় এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন।
৩. কাজের জন্য অধিক সময় পাওয়া
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি উপকারিতা হচ্ছে কাজের জন্য অধিক সময় পাওয়া।
যারা সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে না তারা দিনের বেলা কম সময় পেয়ে থাকেন। এছাড়াও কাজের পরিপূর্ণতা আসে না অর্থাৎ প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন শেষ করতে পারেন না।
যদি খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা যায় তবে কাজের পরিপূর্ণতা আসে অর্থাৎ দিনের কাজ দিনেই শেষ করা যায়।
শুধু কি তাই, দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে অনেক তাড়াহুড়োর মধ্যে পড়তে হয়। যেমন, তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হওয়া তাড়াহুড়ো করে অফিসে যাওয়া বা কাজে যাওয়া।
এমন তাড়াহুড়োর মধ্যে অনেক সময় অফিসে যেতে কিংবা কাজে যেতে দেরি হওয়া ইত্যাদির কারণে কাজগুলো করতে হয় তাড়াহুড়োর মধ্যে।
একটু চিন্তা করে দেখলে বুঝতে পারবেন দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার ফলে কি রকম মানসিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।
অথচ ঘুম থেকে একটু আগে উঠলে এমন তাড়াহুড়োটা আর থাকবে না পাশাপাশি মানসিক অস্থিরতাও থাকবে না ফলে সুন্দরমত নিজের কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারবেন।
৪. চিন্তামুক্ত থাকা
ভোরে ঘুম থেকে ওঠার উপকারিতার মধ্যে আরও একটি উপকারিতা হচ্ছে এতে চিন্তামুক্ত থাকা যায়। সূর্যের প্রথম প্রহরের আলো এই চিন্তা কিংবা দুশ্চিন্তা দূর করতে সহায়তা করে।
এর ফলে একটা এক্সট্রা কাজ করে মনের ভিতরে, মনের ভিতরে তৈরি হয় কাজের জন্য পজিটিভ উন্মাদনা। এই পজিটিভ উন্মাদনাই নিয়ে আসে কাজের সফলতা।
৫. সকালের নাস্তা
দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার ফলে অনেকেই সকালের নাস্তা না করেই বেড়িয়ে পরে কাজের উদ্দেশ্যে। কিন্তু দিনের সকল কাজ শুরুর পূর্বে সকাল বেলার নাস্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সকালের নাস্তা শরীরকে তাজা রাখতে সহায়তা করে এবং শরীর তাজা থাকলে মন মানসিকতাও তাজা থাকে। এর ফলে কাজে মনঃসংযোগের ব্যাঘাত ঘটে না।
৬. শরীরচর্চা
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলে শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করার একটা সুযোগ তৈরি হয়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের ব্যায়াম শরীরের জন্য বেশ উপকারী এবং সারাদিন মন মেজাজ ফুরফুরে থাকে। কাজের প্রতি মনোযোগ বৃদ্ধি পায়, অলসতা আসেনা।
৭. নির্ভেজাল ঘুম
রাতের নির্ভেজাল ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলে রাতে খুব তারাতারি ঘুমাতে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
এমন অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলেই আপনি পেতে পারেন রাতের নির্ভেজাল ঘুম।
৮. মেধাশক্তি বৃদ্ধি
টেক্সাস ইউনিভারসিটির এক দল গবেষক একটি গবেষণায় দেখেছেন, যেসকল শিক্ষার্থী খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে তারা অনেক বেশি মেধাবি হয় এবং তারা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে।
এবং যেসকল শিক্ষার্থী দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে তাদের পরীক্ষার ফলাফল তুলনামূলক ভালো হয় না।এছাড়াও বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠলে এবং রাতে নির্ভেজাল ঘুম হলে শরীর ভালো থাকার পাশাপাশি মেধা শক্তিও বৃদ্ধি পায়।
৯. সুখী জীবন যাপন
খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলে মানুষের জীবন সুখের হয় এর কারণ, এতে করে ইতিবাচক চিন্তা বৃদ্ধি পায় এবং কাজে প্রচুর মনোযোগী হওয়া যায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠে, তারা তুলনামূলক বেশি সুখী হয়ে থাকেন।
এই সুখ ক্ষণিকের জন্য নয়, বরং এই সুখ সারাজীবনের জন্য।
১০. বেশি উৎপাদনশীল হওয়া
সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা মানেই আপনার কাজের গতি বেড়ে যাওয়া আর আপনার কাজের গতি বেড়ে যাওয়া মানেই আপনি হয়ে উঠবেন আরও গতিশীল এবং উৎপাদনশীল।
যারা খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে তারা দুপুরের আগেই দিনের প্রায় সব কাজ সেরে ফেলতে পারেন। এবং সেটি রিয়ালাইজ করতে পারলেই কাজের প্রতি আপনার ভালো লাগা কাজ করবে এবং অধিক হারে বৃদ্ধি পাবে আপনার গতিশীলতা ও উৎপাদনশীলতা।
১১. পড়াশুনা
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে পড়াশুনা করলে সেই পড়া খুব তারাতারি মস্তিস্ক ধরে রাখতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে অন্যান্য সময়ের পড়াশুনার থেকে ভোরের পড়াশুনা অনেক বেশি কার্যকরী।
তথ্যসূত্র: ফোর্বস সাময়িকী, টিএনএন
১২. সকালে ঘুম থেকে উঠার হাদিস
সখর গামেদি (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) এ দোয়া করেছেন,
“হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরুর অংশ বরকতময় করুন।” (তিরমিজি, হাদিস : ১১৯৫)
আরো বর্ণিত হয়েছে,
“রাসুল (সা.) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। বর্ণনাকারী বলেন, সখর (রা.)- একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি তার ব্যবসায়িক কার্যক্রমও ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তার ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয় এবং তিনি বিপুল প্রাচুর্য লাভ করেন।” (আবু দাউদ, হাদিস : ২৬০৬)
এছাড়াও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সুবহে সাদিকের সময় বান্দার রিজিকের বণ্টন হয়। তাই যারা ওই সময়টাতে ঘুমিয়ে থাকে, তারা এই সাফল্য থেকে বঞ্চিত হয়। রিজিকে বরকতের ছোঁয়া পায় না।
আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.) বলেন,
“সকালবেলায় রিজিকের অন্বেষণ করো! কারণ, সকালবেলা বরকতপূর্ণ ও সফলতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত সময়।” (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ, হাদিস : ৬২২০)
রাসুল (সা.)-এর কলিজার টুকরা ফাতেমা (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) ভোরবেলা আমার ঘরে এসে আমাকে ঘুমে দেখতে পেলেন, তখন তিনি আমাকে পা দিয়ে নাড়া দিয়ে বললেন, “হে আমার প্রিয় কন্যা! ওঠো! তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার প্রাপ্য রিজিক গ্রহণ করো! অলসদের দলভুক্ত হয়ো না। কেননা আল্লাহ তাআলা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত মানুষের মাঝে রিজিক বণ্টন করে থাকেন।” (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব, হাদিস : ২৬১৬)
উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অনেক উপকারিতা রয়েছে। আমরা চাইলেই এই উপকারিতাগুলোকে খুব সহজেই গ্রহণ করতে পারি।
আমাদের লেখাটি ভালো লাগলে আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন আশা করা যায় এই লেখাটি আমাদের মনোবল বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
আপনার কোন মতামত থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানিয়ে দিতে ভুলবেন না। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।