রাগ কি?রাগ কখন সমস্যার সৃষ্টি করে!!

 


 রাগ কাকে বলে?

রাগের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলেন, রাগ হচ্ছে এক ধরণের স্বাভাবিক আবেগ। যেমন কোন কারণে মানুষ কাঁদে, রাগও ঠিক তেমনি একটি আবেগ যা অসন্তুষ্টি, বিপদ, শত্রুতা, বিরক্তি, সমস্যা ইত্যাদির কারণে হয়ে থাকে।

বিভিন্ন ইস্যুতে মানুষের স্বাভাবিক রাগ হতে পারে আবার এই ইস্যু হতে পারে বাস্তব কিংবা কল্পনায়। অতীত বর্তমান কিংবা ভবিষ্যতের কোন ইস্যু নিয়েও মানুষের রাগ আসতে পারে।এখানে একটা ছোট প্রশ্ন থেকেই যায়, মানুষ কার উপর রাগ হয়? রাগ এমন একটি আবেগ যা নিজের প্রতি হতে পারে, অন্যের প্রতিও হতে পারেআসুন এবার জেনে নেয়া যাক, রাগের লক্ষণগুলো কি হতে পারে?

রাগের লক্ষণ

মানুষ কাঁদলে যেমন চোখ দিয়ে পানি ঝরে, হাসলে যেমন চেহারা দেখতে সুন্দর লাগে ঠিক তেমনি মানুষ রাগ হলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। আসুন জেনে নেই, রাগের লক্ষণগুলো কি কি?

১. রাগের শারীরিক লক্ষণ

মানুষ রাগ হলে শারীরিক দিক বিবেচনায় কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন,

      • নিঃশ্বাস খাটো বা ছোট হয়ে আসা
      • রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি পাওয়া
      • হাত পা কাঁপা
      • শরীর ঘেমে যাওয়া
      • শরীরের বিভিন্ন অংশের পেশী শক্ত হয়ে যাওয়া
      • চোখ লাল হয়ে যাওয়া
      • স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যাওয়া, ইত্যাদি।

২. রাগের আচরণগত লক্ষণ

মানুষের রাগ আসলে বেশিরভাগ লক্ষণ প্রকাশ পায় তার আচরণে। আসুন জেনে নেই রাগের আচরণগত লক্ষণগুলো কি কি?

      • অল্প থেকে তীব্র সমালোচনা করা,
      • দ্রুত কথা বল,
      • একেবারেই নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া,
      • হালকা থেকে উচ্চস্বরে চিৎকার করা,
      • জিনিসপত্র ভেঙ্গে ফেলা,
      • নিজেকে আঘাত করা,
      • অপরকে আঘাত করা ইত্যাদি।

আসুন এবার জেনে নেয়া যাক, রাগ কখন সমস্যার সৃষ্টি করে?

রাগ কখন সমস্যার সৃষ্টি করে?

রাগ যেহেতু একটা আবেগ তাই রাগ আসাটা খুবই স্বাভাবিক এবং রাগ করলে তা অপরাধ হিসেবেও বিবেচনা করা হয় না।

তবে কিছু কিছু কারণ রয়েছে সেসব হয়ে গেলে তৈরি হয় সমস্যা। এই সমস্যার পরিমাণ ছোট থেকে শুরু করে অনেক বড় হতে পারে। তখন অবশ্য রাগটাকে আর রাগ বলা হয় না। তখন একে বলা হয় আগ্রাসন।আসুন জেনে নেই রাগ কখন সমস্যার সৃষ্টি করে বা রাগ কোন কোন কারণে আগ্রাসনে রূপ নেয়।

      • রাগ যখন তীব্র থেকে অতি তীব্র রূপ ধারণ করে
      • যখন ঘন ঘন রাগ অনুভূত হয় এবং মাত্রাও তীব্র হয়
      • রাগের পরিণতি যখন আক্রমণাত্মক হয়ে যায়
      • রাগ যখন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে থাকে
      • রাগের পরিণাম যখন ধ্বংসাত্মক হয়

উপরোক্ত বিষয়গুলো যখন প্রকাশ পায় তখন তা সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হয়। এবং একে রাগ না বলে বলা হয়ে থাকে আগ্রাসন।

আসুন এবার জেনে নেই, আগ্রাসন কত প্রকার ও কি কি?

আগ্রাসন কত প্রকার ও কি কি?

মানুষের আচরনের মধ্যে সাধারণত ৩ ধরণের আগ্রাসন লক্ষ্য করা যায়। ১. প্যাসিভ অ্যাগ্রিসিভ, ২. ওপেন অ্যাগ্রিসিভ, এবং ৩. অ্যাসারটিভ অ্যাংগার

১. প্যাসিভ অ্যাগ্রিসিভ

প্যাসিভ অ্যাগ্রিসিভ এমন এক প্রকার আচরণ, এখানে মানুষের রাগ সরাসরি প্রকাশ পায় না। এই অবস্থায় মানুষ তার রাগ মনের ভেতরে পুষে রাখেন। এমনকি কেউ বুঝতেও পারেন না যে মানুষটি রেগে আছে।

এ অবস্থায় মনের ভেতরে পুষে রাখা রাগগুলো বিকল্পভাবে প্রকাশ পেয়ে থাকে। এবং বিজ্ঞানীরা বলেছেন এ ধরণের রাগের বিকল্প প্রকাশ মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন, আমাদের মাঝে অনেক মানুষকে দেখা যায় তারা সচারচর রেগে যান না বা খুব কম রেগে যান। কিন্তু একবার রেগে গেলে তা ভয়ঙ্করভাবে প্রকাশ পায়।

এ ধরণের রাগ নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হয়ে যায়। অনেকটা বারুদের মতো। একটু একটু করে জমতে জমতে অনেক বড় আকার ধরণ করে এবং একটা সময় বিকটভাবে বিস্ফোরিত হয়।

২. ওপেন অ্যাগ্রিসিভ

এই অবস্থায় ব্যাক্তি তার ক্ষোভ বা রাগকে মনের ভেতরে পুষে না রেখে অল্প থেকে তীব্র আক্রমণাত্মকভাবে প্রকাশ করে থাকে।

মৌখিকভাবে কিংবা শারিরিকভাবে এ ধরণের ব্যক্তি অন্যকে আঘাত করে থাকেন। অনেকে আবার নিজেই নিজেকে আঘাত করে থাকেন।

অভিযোগ করা, তীব্র সমালোচনা করা, কটাক্ষ করা, হুমকি দেয়া, ঝগড়া করা, ব্লাকমেইলিং করা, চিৎকার করা ইত্যাদি আচরণের মাধ্যমে ব্যক্তির আগ্রাসন বা তীব্র রাগ প্রকাশ পেয়ে থাকে।

৩. অ্যাসারটিভ অ্যাংগার

অ্যাসারটিভ অ্যাংগার এমন একটি অবস্থা যেখানে ব্যক্তি তার রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে কিংবা রাগের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে থাকে।

এ ক্ষেত্রে রাগের প্রকাশটা একটু অন্য রকম হয়ে থাকে। যেমন কোন ব্যক্তি কারোর উপর রেগে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু তাকে সরাসরি আক্রমণ না করে ঐ ব্যক্তির সম্মান রক্ষা করে তার রাগের কারণ খুলে বলা।এতে করে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ঠিক থাকে, নিজের ব্যক্তিত্ব ঠিক থাকে এমনকি তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকে।

আসুন এবার জেনে নেই, কিছু মানুষ অন্যদের তুলনায় বেশি রাগী হয়ে থাকেন কেন?

অতিরিক্ত রাগ হওয়ার কারণ

আমাদের সমাজে কিছু মানুষ আছে তারা একটু ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে, তাদের রাগ অনেক বেশি হয়ে থাকে।

কেন অতিরিক্ত রাগ হয়? এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন গবেষণা করে বের করেছেন নানা তথ্য। আসুন জেনে নেই কি কি কারণে মানুষ অতিরিক্ত রেগে যায়?

    • বংশগত কারণ অর্থাৎ মা বাবা রাগী স্বভাবের হলে। 
    • কোন কাজে অদক্ষ হওয়ার কারণে মানুষ অতিরিক্ত রাগী হতে পারে।
    • মনের ভিতরে সবসময় হতাশা কাজ করলে।
    • ইতিবাচক চিন্তা না করে সব সময় নেতিবাচক চিন্তা করলে।
    • দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত থাকলে।
    • দীর্ঘদিন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত থাকলে।
    • ব্যক্তি যদি সবসময় মনে করে যে, তার সাথে অন্যায় করা হচ্ছে।
    • সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হলে।
    • সামাজিক সমর্থন কম থাকলে।
    • মাদকাসক্ত হলে।
    • সবসময় দুশ্চিন্তা করলে।
    • বিষণ্ণতায় ভুগলে।
    • দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক সমস্যায় থাকলে।
    • বিবাহিত জীবনে কলহ থাকলে
    • যৌন রোগ থাকলে।
    • উচ্চ বিলাসি বা কল্পনার জগতের মানুষ হলে।
    • সবসময় প্রতিযোগী মনোভাব থাকলে।
    • যে কোন কাজে ধৈর্য না থাকলে।
    • দীর্ঘদিন ধরে কোন না কোন চাপে থাকলে, ইত্যাদি।উপরোক্ত কারণগুলো মূলত একজন ব্যক্তিকে অতিরিক্ত রাগী করে তোলে। সব কারণই যে থাকতে হবে বিষয়টা তেমনটাও নয়। একটি অথবা একাধিক কারণেও মানুষের রাগ অতিরিক্ত হতে পারে।রাগ নিয়ে তো অনেক আলোচনা করা হলো। আসুন এবার জেনে নেই অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় বা অতিরিক্ত রাগ কমানোর উপায় বা কৌশল গুলো কি কি?

      অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় বা রাগ কমানোর উপায়

      আমরা জানি মাত্রাতিরিক্ত কোনকিছুই ভালো কিছু নিয়ে আসে না। অতিরিক্ত জেদ, অনিয়ন্ত্রিত রাগ বা অতিরিক্ত রাগ, অ্যাগ্রিসিভ মনোভাব ব্যক্তিকে ভয়ঙ্কর দিকে নিয়ে যায়।

      নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে একে অন্যকে হত্যা পর্যন্ত করে ফেলে। এমনকি মানুষ আত্মহত্যাও করে থাকে।

      অতিরিক্ত রাগ বা জেদ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অনেকেই নিজের শরীরের ক্ষতি করে থাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে খুব ভালো সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

      স্বামী স্ত্রীর সুখের সংসার নিমিষেই ভেঙ্গে যেতে পারে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে। তাই অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশল রপ্ত করা খুবই জরুরী একটা বিষয়।

      আসুন তাহলে জেনে নেই অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় গুলো কি কি বা অতিরিক্ত রাগ কমানোর উপায় গুলো কি কি?

      রাগ সাধারণত দুইভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। একটা হচ্ছে জ্ঞানের মাধ্যমে আর একটা হচ্ছে আচরণগত পরিবর্তনের মাধ্যমে।

      আসুন প্রথমে জেনে নেই, জ্ঞানীয় ভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়।

      জ্ঞানীয়ভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়

      ব্যক্তি কেন, কার সাথে, কি কারণে, কি কি বিষয়ের উপর রাগ করে তা বুঝতে পারলেই রাগ নিয়ন্ত্রণ করা অনেক সহজ হয়ে যায়।

      আসুন তাহলে জেনে নেই, জ্ঞানের মাধ্যমে কীভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

      ১. সুবিধা-অসুবিধা উপলব্ধি

      আমরা কম বেশি সবাই রাগ নিয়ে একটি প্রবাদ বাক্য শুনে থাকি “রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন”। কোন কারণে মানুষের রাগ আসতেই পারে কিন্তু সবাই রাগের ফলাফল বা সুবিধা অসুবিধাগুলো নিয়ে চিন্তা করেন না।

      কোন কারণে রেগে যাওয়ার পর ব্যক্তি যদি চিন্তা করে যে, সে কেন রেগে গেল, সে কার সাথে রাগ করেছে, রাগ করার ফলে ক্ষতি কতটুকু হল, এবং লাভ কি আসলো?ইত্যাদি বিষয় যদি ব্যক্তি ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে তবে সে বুঝতে পারবে যে রাগের ফলে তার ক্ষতিটাই বেশি হয়েছে।

      আর কোন ব্যক্তি যখন অনুধাবন করতে পারবেন যে রাগ করার কারণে তার ক্ষতির পরিমাণ বেশি তাহলে সে রাগের অবস্থান থেকে ধীরে ধীরে সরে আসতে পারবে।

      এবং যে সমস্যার কারণে সে রেগে যাচ্ছে সেসব সমস্যাগুলোকে ঠাণ্ডা মাথায় সমাধান করতে পারবেন। যাকে আমরা অ্যাসারটিভ ডিল বলতে পারি।

      এ কথা সত্যি যে, রাগের সময় মানুষের মস্তিস্ক ঠিক থাকে না সাথে ভালো কিংবা মন্দের বোধ হারিয়ে ফেলে।

      কিন্তু রাগ থেকে ব্যক্তি যখন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, তখন সে বুঝতে পারে যে সে যে কারণে রাগ করেছে তা প্রকৃতপক্ষে সঠিক ছিল না।

      এই বুঝতে পারার ক্ষমতাটা সবার মাঝে থাকে না, তবে প্রতিনিয়ত প্র্যাকটিস করার মাধ্যমে এই সক্ষমতা অর্জন করা যায়। অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি একটি অন্যতম উপায়।

      ২. নিজের রাগ বা চিন্তাগুলকে চ্যালেঞ্জ করা

      রাগ করার জন্য ব্যক্তির নিজস্ব কিছু চিন্তা চেতনা বা বিশ্বাস অবশ্যই আছে। যার কারণে ব্যক্তি রাগ করাটাকে অত্যান্ত যৌক্তিক মনে করে থাকেন।

      রাগ স্বাভাবিক হয়ে গেলে সেই চিন্তা চেতনার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করা যেতে পারে। অর্থাৎ আপনি যার সাথে রাগ করেছেন, তার অবস্থানে আপনি গিয়ে আপনার চিন্তা চেতনার সাথে কথা বলুন।

      এবং চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিন যে, আপনার চিন্তাগুলো সে ক্ষেত্রে কতটুকু যৌক্তিক ছিল? এবং পুনরায় চিন্তা করুন এবং চিন্তা করুন।

      এভাবে চিন্তা করলে একটা সময় অন্যের প্রতি এবং অন্যের মতামতের প্রতি একটা সম্মানবোধ চলে আসবে আর এটা আসলেই আপনার রাগের বহিঃপ্রকাশ হবে ইতিবাচক।

      এটাও চিন্তা করুন যে, এর থেকে ভালো এবং উন্নতভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় আর কি হতে পারে?

      ৩. বিকল্প চিন্তা করা

      আপনি একটা বিষয় নিয়ে যেভাবে চিন্তা করেন অন্যরা হয়তো সেটাকে সেভাবে চিন্তা করছে না। আপনি যেভাবে ভাবছেন অন্যরা হয়তো সেভাবে ভাবছেন না।

      আপনি যেভাবে কোন বিষয়কে গ্রহণ করছেন অন্যরা হয়তো সেটাকে আপনার মতো করে গ্রহণ করছেন না।

      সুতরাং বিকল্প চিন্তা করুন। বিকল্প চিন্তা করলে এমনও হতে পারে যে আপনার রাগের কোন যৌক্তিকতাই নেই।

      একই ঘটনাকে আপনি নেতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করছেন কিন্তু অন্যরা সেটাকে ইতিবাচক হিসেবেও গ্রহণ করতে পারেন। আবার ঘটনাটি ইতিবাচক হওয়ার পিছনে যৌক্তিক কারণও থাকতে পারে।

      আপনার দৃষ্টিভঙ্গি যদি পরিবর্তন করেন তাহলে একই ঘটনাকে বিভিন্নভাবে অথবা অন্যদের মতো ব্যাখ্যা করতে পারবেন।

      মাথায় রাখা জরুরী যে, আপনার চিন্তা ভাবনাই একমাত্র চিন্তা ভাবনা নয়। আর এমনটা মনে করারও কোন যৌক্তিকতা নেই।

      কাজেই বিকল্প চিন্তা ভাবনা করলে কিংবা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করলে আপনার রাগের কারণ কতোটা যৌক্তিক সেটা খুব ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারবেন।

      আর যখনই এমনটা অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন ঠিক তখন থেকেই আপনার রাগের বহিঃপ্রকাশ প্রশমিত হয়ে আসবে।

      মনে রাখবেন অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলোর মধ্যে এটি একটি কার্যকরী উপায়।

      ৪. মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া

      রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় গুলোর মধ্যে একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে রাগের সময় নিজের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া। অথবা ভিন্ন কোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখা।

      রাগের বশবর্তী হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নিজের চিন্তা ভাবনাকে অন্যদিকে ধাবিত করতে পারলেই আপনি কামিয়াব।

      এ অবস্থাকে মূলত আপনি ছেড়ে দিচ্ছেন না, বরং ছাড় দিচ্ছেন। এখানে আপনার নিরবতা অথবা বিবাদে কান না দেয়াটাই সৃষ্ট উদ্ভট পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে পারে।

      রাগের বা ঝগড়ার পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে গেলে ঐ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলুন ঠাণ্ডা মেজাজে। আপনার নিজের অবস্থান ক্লিয়ার করুন মাথা খাটিয়ে।

      এমনটা করলে অপর প্রান্তের মানুষটি হয়তো তার নিজের ভুল বুঝতে পারবে এবং আপনাকে সরি বলতে বাধ্য হবে।

      ৫. সমস্যার সমাধান করা

      যে কারণে আপনার রাগ হচ্ছে সে কারণগুলোকে চিহ্নিত করা আপনার প্রথম এবং প্রধান কাজ। মানুষ তো খামোখা রেগে যায় না। কোন না কোন সমস্যার কারণে রেগে যায়।

      সমস্যাগুলোকে খুঁজে বের করে তা বুদ্ধিমত্তার সাথে সমাধান করা। যদি নিজে সমাধান না করতে পারেন তবে নিকটস্থ কারোর কাছ থেকে পরামর্শও নিতে পারেন।

      আপনার মাথায় যখন বিকল্প সমাধান এসে যাবে তখন তা বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রয়োগ করুন। সবসময় মাথায় রাখুন, রাগের সময় চিন্তা বা মনোযোগ ব্যক্তিকেন্দ্রিক না হয়ে সমস্যাকেন্দ্রিক হলে রাগের বশবর্তী হয়ে বিদঘুটে পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।

      এতে করে রাগের নিয়ন্ত্রণ হবে পাশাপাশি সমস্যারও সমাধান হবে।জ্ঞান প্রয়োগ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় গুলো জেনে নিলাম। এবার আসুন জেনে নেয়া যাক, আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে কীভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়?

      আচরণগত পদ্ধতিতে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায়

      রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় গুলোর মধ্যে কার্যকরী উপায়গুলো এখানে তুলে ধরা হয়েছে, যা আচরণগত পদ্ধতি বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

      আসুন জেনে নেই, আচরণ পরিবর্তনের মাধ্যমে বা আচরণগত পদ্ধতিতে রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়।

      ১. পরিবেশ পরিবর্তন করা

      যে স্থানে রাগ হচ্ছে এটা যদি আপনি বুঝতে পারেন তবে উচিৎ হবে দ্রুত সে স্থান পরিবর্তন করা। নিজের রাগ স্বাভাবিক হলে সে বিষয় নিয়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে সমস্যার সমাধান করা।

      রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলোর মধ্যে এটা একটি অন্যতম কার্যকরী উপায়।

      ২. উল্টোভাবে সংখ্যার গণনা করা

      মানুষের রাগ আসবে এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, বলা চলে সহজাত প্রবৃত্তি। রাগ নেই এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

      তবে এ কথা সত্য যে, অতিরিক্ত রাগ মোটেও ভালো কিছু নিয়ে আসবে না। তাই অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটা কার্যকরী উপায় হচ্ছে রাগের পরিবেশ তৈরি হলে উল্টোভাবে সংখ্যার গণনা করা।

      যেমন, ১০০, ৯৯, ৯৮, ৯৭, ৯৬, ৯৫ …………..৫, ৪, ৩, ২, ১। এখন প্রশ্ন আসতে পারে কেন? রাগ আসলে এমন পরামর্শ দেয়ার কারণ হচ্ছে মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়া।

      আর মনোযোগ অন্যদিকে সরে গেলে ধীরে ধীরে অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। এবং তা পরীক্ষিত, আপনি চাইলে নিজেও পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

      ৩. মেনে নেয়া বা মানিয়ে নেয়া

      জীবনে চলার পথে অনেক সমস্যা আসবে, অনেক প্রশ্ন আসবে, অনেক আনকমন বিষয় আসবে। কিন্তু কিছু সমস্যা থেকে যায় যার কোন সমাধান হয় না।

      অনেক প্রশ্নের উত্তর পেলেও কিছু প্রশ্ন থাকে সেসবের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না। তেমনি অনেক কিছুর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও করা যায় না।

      তাই বলে কি রাগ করে নিজের ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসবেন? না ভুলেও এমন করা যাবে না। তাহলে উপায় কি? এক্ষেত্রে উপায় হচ্ছে মেনে নেয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করা।

      মনে রাখবেন, মেনে নেয়ার অর্থ যে আপনি হেরে যাবেন বিষয়টা এমন নয়। তবে এক্ষেত্রে মন খারাপ হতে পারে, এই মন খারাপটা আপনাকে মেনে নিতে হবে। তাহলেই দেখবেন আপনি শান্তি পাবেন।

      প্রতিটি মানুষই জীবনে পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপূর্ণতা থেকেই যায়। এই অপূর্ণ বা অপ্রাপ্তি বিষয়গুলোকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা না করে বরং প্রাপ্তিগুলোর প্রতি মনোযোগ দেয়া উচিৎ।

      এতেই প্রশান্তি আসবে এবং মন ভালো থাকবে সাথে রাগও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

      ৪. ইতিবাচক চিন্তা করা

      জীবনে যাই ঘটুক না কেন, প্রতিটি ঘটনার যেমন খারাপ দিক থাকে ঠিক তেমনি ভালো দিকও থাকে। তবে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই খারাপ দিকটাই গ্রহণ করে থাকি।

      ঘটে যাওয়া ঘটনাটির পিছনে ভালো কিছু তো থাকতে পারে। সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা কেউ করি না। ভালো দিকটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা উচিৎ।

      আপনি এক গ্লাস পানি আকাঙ্ক্ষা করেছেন মনে মনে। কিন্তু আপনার সামনে অর্ধেক গ্লাস পানি আছে, তাই বলে আপনি কি রাগ করবেন! নাকি অর্ধেক গ্লাস পানি পান করে আপাতত তৃষ্ণা নিবারণ করবেন?

      এখানে আপনার রাগ করাটা মোটেও উচিৎ হবে না বরং নিজের কাছেই অভূতপূর্ব মনে হবে যদি ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করেন।

      মনে রাখা জরুরী, জীবনের প্রতিটি ঘটনার দুটি দিক অবশ্যই থাকে। একটা হচ্ছে ইতিবাচক এবং অপরটি হচ্ছে নেতিবাচক।

      নেতিবাচক দিকটা গ্রহণ করলে রাগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে ইতিবাচক দিকটা গ্রহণ করলে রাগ এর সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

      এখন আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আপনি কোনটা বেছে নিতে চান?

      ৫. রাগ না করার শপথ নেয়া

      আমরা অনেকেই শুনে থাকি, নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। এমন যুদ্ধে জয়ী খুব একটা সহজ নয় আবার কঠিনও নয়।

      তাই নিজের মনের সাথে প্রতিজ্ঞা করুন, জীবনে যাই ঘটুক না কেন আপনি রেগে যাবেন না। রাগের পরিস্থিতি তৈরি হলে নিজের মনকে শপথের কথা স্মরণ করিয়ে দিন বারবার।

      এভাবে প্র্যাকটিস করতে থাকুন প্রতিটি রাগের পরিস্থিতিতে। তাহলে দেখবেন আপনার অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই সহজ হয়ে যাবে।

      ৬. ক্ষমা করে দেয়ার মানসিকতা তৈরি করুন

      গুণীজনেরা একটা কথা সর্বদাই বলে থাকেন, ক্ষমা মহৎ গুণ। প্রতিশোধের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকলে জীবনে কখনোই ভালো কিছু আশা করা যায় না।

      ধরুন, আপনি একজনের উপর ভীষণ রেগে আছেন কিন্তু যার উপর রেগে আছেন সে মোটেও চিন্তিত নয় আপনাকে নিয়ে।

      অথচ আপনি নিজেই নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন প্রতিশোধের নেশায় বুঁদ হয়ে। একবার চিন্তা করে দেখুন আপনি কি সত্যিই ঠিক করছেন?

      তাই প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে ক্ষমা করে দেয়ার মানসিকতা তৈরি করুন। এতে নিজেও ভালো থাকতে পারবেন এবং অপর প্রান্তে থাকা মানুষটিও ভালো থাকবেন।

      ৭. রসবোধ বৃদ্ধি করা

      অনেক মানুষকে সবসময় সিরিয়াস দেখা যায়। এটি মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। কারণ সর্বদা সিরিয়াসনেস ভালো কিছু নিয়ে আসে না।

      মনে রাখবেন অতিরিক্ত মাত্রায় সিরিয়াসনেস রাগের অন্যতম একটি কারণ। তাই মাঝে মাঝে কৌতুক করুন বা মজা করুন। এতে যেকোনো পরিবেশ হালকা হতে বাধ্য।

      আপনি রেগে যাচ্ছেন এমনটা মনে হলে রাগের পরিবেশ হালকা করার জন্য মজার কিছু চিন্তা করুন তাহলে অন্তত আপনার রাগ থেকে মনোযোগ সরে আসবে।

      ৮. যোগাযোগ বৃদ্ধি করা

      রাগী মানুষের বেশ কিছু স্বতন্ত্র সভাব রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তারা অন্যের কথা মানতে চায় না এবং শুনতেও চায় না।

      যদিও কখনো কখনো অন্যের কথা পুরো পুরি শোনার পূর্বেই অনেকের মনে নেতিবাচক ধারণার জন্ম নেয়। আর এই নেতিবাচক ধারণার থেকে জন্ম হয় রাগের।

      এই অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় কি তাহলে? এই অবস্থা বা পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় হচ্ছে ভালো শ্রোতা হওয়া। অর্থাৎ মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার মানসিকতা তৈরি করা।

      অপর ব্যক্তি কি বলতে চাচ্ছে সেটা পুরোপুরি না শুনে যদি আপনি রেগে যান তবে সেটা নিশ্চয়ই ভালো কিছু বয়ে আনবে না। হতে পারে তার পুরো কথা শুনলে আপনারই লাভ হত।

      ধরুন কেউ আপনার নামে একটা বদনাম রটালো। বদনাম যে রটিয়েছে তার উপর আপনার রাগ আসবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রথমে আপনাকে বেশ কয়েকটি কাজ করতে হবে।

      প্রথমে আপনাকে ভালোভাবে জানতে হবে কি বদনাম রটিয়েছে? কে রটিয়েছে, কেন রটিয়েছে ইত্যাদি। মনে রাখবেন বদনাম রটানোর ২ টি কারণ থাকতে পারে।

      একটি হচ্ছে বদনামকারী আপনার সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না। অপরটি হচ্ছে আপনি ভুল নন কিন্তু ঐ ব্যক্তি আপনাকে হেয় করার জন্য আপনার সম্পর্কে বানিয়ে বলেছে।

      এক্ষেত্রে আপনি আপনাকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি দোষী? অবশ্যই উত্তর আসবে আপনি দোষী নন। দোষী ঐ ব্যক্তি যে আপনার নামে কুৎসা বা বদনাম রটিয়েছে।

      যদি এটা বুঝতে পারেন তবে আপনি কেন খামোখা রাগ করবেন? নিজের আবেগ নিজের কব্জায় রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করুন।

      অন্য কেউ যেন আপনার আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। তাহলেই দেখবেন আপনার অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

      ৯. রিলাক্সে থাকার চেষ্টা করা

      চিকিৎসা বিজ্ঞান একটা কথা বলে থাকে, মানুষের শরীরে স্ট্রেস হরমোন নামক একটি হরমোন রয়েছে যার নিঃসরণ বেশি হলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় এবং রাগ বৃদ্ধি পায়।

      তাই স্ট্রেস হরমোন কমানোর জন্য রিলাক্স থাকাটা আবশ্যক। রিলাক্স থাকতে পারলে হরমোনের মধ্যে একটা সমতা চলে আসবে এবং রাগও নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

      ১০. মানসিক ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা

      উপরোক্ত পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করেও যদি আপনার রাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে না পারেন তবে একজন ভালো মানসিক ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

      এক্ষেত্রে মানসিক ডাক্তারের পরিবর্তে মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শও গ্রহণ করতে পারেন। তারা হয়তো সাইকোথেরাপির মাধ্যমে আপনাকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কৌশল শিখিয়ে দেবেন।

      রাগ মানুষের স্বাভাবিক আবেগগুলোর একটি তাই রাগ আসাটাও খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অতিরিক্ত রাগ মোটেও ভালো নয়। তাই অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।আর অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণ করার উপায় বা অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণের উপায় জানা থাকলে এ কাজটি আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে উঠবে। 

নবীনতর পূর্বতন