ভিপিএন (VPN) এর পূর্নরূপ হচ্ছেঃ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (Virtual Private Network)। একটি সফটওয়্যার এর মাধ্যমে আপনি পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহারের সময়ে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক এর সুবিধা নিতে পারবেন ভিপিএন এর মাধ্যমে, যেন আপনি সরাসরি সে প্রাইভেট নেটওয়ার্ক এর সাথে যুক্ত আছেন। ফলে বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অন্যান্য ব্যাপার যা হয়ত আপনার নেটওয়ার্ক থেকে এক্সেস করা সম্ভব হয়না তা আপনি এই ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে এক্সেস করতে পারবেন। এতে আপনি শেয়ার্ড বা পাবলিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলেও এই নেটওয়ার্ক থেকে আপনাকে ট্র্যাক করা সম্ভব হয়না। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা নিজেদের গোপনীয়তা রক্ষায়, কেবলমাত্র কোন নির্দিস্ট অঞ্চল থেকে এক্সেস করা যায় এমন কন্টেন্ট পেতে ও অন্যান্য অনেক কারনে ভিপিএন ব্যবহার করে আসছেন। ভিপিএন এর মাধ্যমে আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের লোকেশন ভার্চুয়ালি বদলে যাওয়ায় আপনাকে আইপি এড্রেসের মাধ্যমে ট্র্যাক করা কষ্টকর হয়ে যায়, ফলে আপনার গোপনীয়তা বজায় থাকে এবং আপনি কিছু বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন।
ভিপিএন কিভাবে কাজ করে?
প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর নিজস্ব আইপি এড্রেস থাকে। এটি আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারকালে একপ্রকার নিজস্ব পরিচয় হিসেবে কাজ করে থাকে। ভিপিএন এই আইপি এড্রেসটি লুকিয়ে ফেলে। এরফলে আপনার আইপি এড্রেস, আপনি কি কি ওয়েবসাইট ব্রাউজ করছেন, কোন জায়গা থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন এসব তথ্য আর ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান বা কোন থার্ড পার্টি জানতে পারে না।
ভিপিএন কোম্পানীগুলোর নিজস্ব সার্ভার থাকে। সেই সার্ভারে যদি আপনি যুক্ত হন, তবে আপনি তাদের প্রাইভেট নেটওয়ার্ক এর আওতায় চলে আসেন। এর ফলে যেটা হয়, আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় ডাটার সোর্স আর আপনার লোকাল ইন্টারনেট সার্ভিস বা কোন নেটওয়ার্ক থাকে না, বরং আপনার ডাটার সোর্স হয় ভিপিএন হোস্ট। ফলে আপনি যেহেতু ভিপিএন এর থেকে ডাটা ব্যবহার করছেন, সাধারন সোর্স থেকে সরাসরি ব্যবহার করছেন না, তাই ইন্টারনেটের সংযোগদানকারী কোম্পানী বা অন্য কেউ আপনার ব্যাপারে কোন তথ্য জানতে পারেনা। ভিপিএন এর বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি সার্ভার থাকে, যাতে আপনি কানেক্ট করতে পারেন। সেগুলো সবই প্রাইভেট নেটওয়ার্ক।
এভাবে ভিপিএন আপনাকে নিজস্ব সার্ভারের অন্য একটি প্রাইভেট নেটওয়ার্ক এর সাথে যুক্ত করে, ফলে আপনি একটি পাবলিক নেটওয়ার্ক বা শেয়ার্ড নেটওয়ার্কের অধীনে ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও প্রাইভেট নেটওয়ার্কের সুবিধা পেয়ে থাকেন। যেমন আপনি বাংলাদেশে থাকলেও যে ওয়েবসাইটে হয়ত বাংলাদেশ এর নেটওয়ার্ক দ্বারা এক্সেস করা যায়না, আপনি ভিপিএন কানেক্ট করার মাধ্যমে অন্য সার্ভারে যুক্ত হয়ে সেই অঞ্চলের প্রাইভেট নেটওয়ার্কের সুবিধা পাওয়ার মাধ্যমে সেই ওয়েবসাইটটি ব্রাউজ করতে পারবেন। কারন সেই দেশ থেকে সেই ওয়েবসাইটটি ব্রাউজ করার অনুমতি রয়েছে। ভিপিএন সার্ভারে যুক্ত হওয়ার কারনে আপনার আইপি এড্রেস বদলে ওই অঞ্চলের আইপি এড্রেস হিসেবে দেখায় যার কারনে আপনি তখন এই এক অঞ্চলে থেকে অন্য অঞ্চলের সুবিধাটি পেয়ে থাকেন। ফলে আপনি ভিপিএন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকেন ও আপনার গোপনীয়তা বজায় থাকে।
বর্তমানের সেরা ও জনপ্রিয় ১০ টি ফ্রি ভিপিএন
ভিপিএন এর এই সুবিধাগুলো পাওয়ার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভিপিএন কিনতে করতে হয় এবং মাসিক একটা টাকা দিতে হয় ভিপিএন সার্ভিস ব্যবহার করার জন্য। তবে কিছু ফ্রি ভিপিএন ও রয়েছে যা এসব কাজে সীমিত আকারে ব্যবহার করা যায়। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সেরা দশটি ফ্রি ভিপিএন সার্ভিস হলোঃ
১) Windscribe VPN
যদি আপনার ভিপিএন ব্যবহারের প্রধান কারন হয়ে থাকে নিরাপত্তা বা নিজের ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর সময় গোপনীয়তা রক্ষা, তাহলে আপনার জন্য ফ্রি ভিপিএন সার্ভিসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত হচ্ছে এই Windscribe ভিপিএনটি।
সুবিধাঃ
- যেকোন ডিভাইস এই ভিপিএনটি সহজেই কানেক্ট করা যেতে পারে। এটি হতে পারে কোন এন্ড্রয়েড ফোন, ম্যাকবুক, IOS বা উইন্ডোজ সিস্টেম। সবক্ষেত্রেই এটি ভালোভাবেই কাজ করে।
- অ্যাড ও ম্যালওয়্যার ব্লকিংঃ এই ভিপিএটিতে অ্যাড ও ম্যালওয়্যার ব্লক করার জন্য বেশ শক্তিশালী ব্যবস্থা রয়েছে যা অন্যান্য ভিপিএনের তুলনায় একে আলাদা করে থাকে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় এটি অ্যাড এবং ম্যালওয়্যার যা আমাদের ব্রাউজিং এক্টিভিটি কে ট্র্যাক করতে পারে তার সবগুলোকে আটকে দেয়, ফলে আপনার গোপনীয়তা বজায় থাকে। ফলে কোন বিজ্ঞাপনদাতার কাছে আপনার তথ্য বিক্রি করে আপনাকে টার্গেটেড অডিয়েন্স বানানোর ঘটনা বা ফোন থেকে ম্যালওয়্যার এর কারনে তথ্য চুরির মত ব্যাপারগুলো ঘটবে না।
- সার্ভার সংখ্যাঃ এই ভিপিএনটিতে দশের অধিক সার্ভার রয়েছে যা আপনি ব্যবহার করতে পারেন। ফলে কোন বিশেষ সার্ভারে অসুবিধা বোধ করলে বা অন্য কোন অঞ্চলের সার্ভার ব্যবহারের প্রয়োজন হলে তা করা সম্ভব।
- প্রাইভেসি পলিসিঃ এই ভিপিএনটি আপনার তেমন কোন তথ্য নেয়না। এছাড়াও এর পলিসি অনুযায়ী আপনি ভিপিএন ডিসকানেক্ট করার পর যেই সকল তথ্য আপনার থেকে নেওয়া হয়েছিলো তা রিমুভ করে দেয়। ফলে আপনার নিরাপত্তা বজায় থাজে। এটি শুধুমাত্র আপনার কানেকশন ও ডাটা ইউজের একটি হিসাব রাখে যাতে আপনি একমাসে কি পরিমানে এই সার্ভিসটি ব্যবহার করতে পারবেন তা নিয়ন্ত্রন ও একাউন্ট শেয়ারিং বন্ধ করতে পারে।
অসুবিধাঃ
- ডাটা ক্যাপাসিটিঃ এই ভিপিএন সার্ভিসটি আপনাকে মাসে কেবলমাত্র ১০ জিবি ডাটা ব্যবহারের অনুমতি দেয়। এটি যারা বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য কম।
- কোন লাইভ চ্যাট সাপোর্ট নেই, একটি বট সিস্টেম আপনার এই ভিপিএন ব্যবহারের সময় সম্মুখীন হওয়া কিছু সাধারন সমস্যার উত্তর দিয়ে থাকে।
এই ভিপিএনটির পেইড ভার্সনে রয়েছে আরো অনেক বেশি সুযোগ সুবিধা, যার জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে মাসিক প্রায় ৪.০৮ ডলার।
ফ্রি ভার্সনটি ডাউনলোড করুনঃ Windscribe
২) Hide.me VPN
আপনি যদি ভিপিএন কানেকশনে বেশি গতি আশা করে থাকেন তবে আপনার জন্য মানানসই একটি ফ্রি ভিপিএন হলো এই Hide.me ভিপিএনটি৷
সুবিধাঃ
- নিরাপত্তাঃ এটি আপনার তেমন কোন তথ্যই নিবে না। ফলে আপনার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বজায় থাকবে।
- গতিঃ এটি বেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন ভিপিএন। এর স্পিড ফ্রি ভার্সনটিতে প্রায় ৭৩ মেগাবাইট পার সেকেন্ড। তবে ১০ জিবি ড্যাটা ক্যাপাসিটি ব্যবহার করে ফেললে স্পিড ৩ মেগাবাইট পার সেকেন্ডে সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অন্যান্য ভিপিএন থেকে ভালো গতিতে কাজ করে থাকে।
- সার্ভার সংখ্যাঃ এ ভিপিএনটি ফ্রি ভার্সনে আপনাকে ৫ টি সার্ভারে কানেক্ট করার সুযোগ দিয়ে থাকে।
অসুবিধাঃ
- এটি বেশিরভাগ OTT অ্যাপের ক্ষেত্রেই আঞ্চলিক রেস্ট্রিকশন আনব্লক করতে পারেনা। ফলে অনলাইন কন্টেন্ট দেখার জন্য এটি অত ভালো নয়।
- ডাটা ক্যাপাসিটি মাত্র ১০ জিবি, যা বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য কিছুটা সমস্যার সৃস্টি করে।
আরো সুবিধা পেতে এর পেইড ভার্সনটির জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে মাসিক ২.৭৫ ডলার।
ফ্রি ভার্সনটি ডাউনলোড করুনঃ Hide.me
৩) Proton VPN
প্রোটন ভিপিএন সারাবিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিপিএন সার্ভিস গুলোর একটি এবং এর ফ্রি ভার্সনেও অন্যান্য ভিপিএন এর অনেক পেইড ফিচার রয়েছে৷ এটি বিখ্যাত এনক্রিপটেড ইমেইল সার্ভিস কোম্পানী প্রোটনমেইল এর তৈরি ভিপিএন তাই এর নিরাপত্তা নিয়ে বেশ নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
সুবিধাঃ
- ডাটা ক্যাপাসিটিঃ এ ভিপিএন এর রয়েছে। আনলিমিটেড ডাটা ক্যাপাসিটি। যা সাধারনত ফ্রি ভিপিএন এ দেওয়া হয় না, তবে প্রোটন ভিপিএন এ রয়েছে।
- গতিঃ বেশ দ্রুতগতিসম্পন্ন সম্পন্ন। ফ্রি ভার্সনে এর স্পিড প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৯৫ মেগাবাইট ( তবে আপনার ইন্টারনেট কানেকশনের গতির উপরেও তা নির্ভর করে )।
- নিরাপত্তাঃ এই ভিপিএনটির সিকিউরিটি সিস্টেম ও প্রাইভেসি পলিসি বেশ ভালো। ফলে আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর সময় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় এবং আপনর নিরাপত্তা বজায় থাকে।
অসুবিধাঃ
- ভিপিএনটি মাত্র ৩ টি সার্ভারে এক্সেস করার অনুমতি দেয়। যার ফলে ফ্রি সার্ভারে বেশ চাপ পড়ায় কিছুটা অসুবিধার সৃস্টি হতে পারে।
- OTT প্লাটফর্মের আঞ্চলিক রেস্ট্রিকশন আনব্লক করে স্ট্রিমিং এর জন্য এই ভিপিএনটি মানানসই নয়।
- কোন লাইভ চ্যাট সাপোর্ট নেই। তবে ভিপিএন সংক্রান্ত সমস্যায় ইমেইল করা যায়, তবে ইমেইল করতে গেলে অবশ্যই প্রাইভেসি কিছুটা ঝুঁকিতে পড়ে।
এই ভিপিএনটির পেইড ভার্সনটির জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে মাসিজ ৬.৬৩ ডলার।
ফ্রি ভার্সনটি ডাউনলোড করুনঃ ProtonVPN
৪) Avira Phantom VPN
নতুন ভিপিএন ব্যবহারকারীদের জন্য আদর্শ একটি ভিপিএন হতে পারে এই Avira Phanton VPN.
সুবিধাঃ
- যেকোন ডিভাইসে কানেক্ট করা যায় এবং কয়টি ডিভাইসে কানেক্ট করতে পারবেন এরকম কোন সীমাবদ্ধতা নেই, যতটি ডিভাইসে ইচ্ছা ততটিতেই কানেক্ট করতে পারবেন।
- প্রাইভেসি পলিসি বেশ ভালো এবং তেমন কোন তথ্য নেয়না। ফলে নিরাপত্তা বজায় থাকে।
- ভিপিএনটি বেশ ইউজার ফ্রেন্ডলি তথা ব্যবহার করা খুব সহজ।
- এর ফ্রি ভার্সনটিতে ৫২+ সার্ভার রয়েছে।
অসুবিধাঃ
- টরেন্টিং করা যায়না।
- ম্যানুয়ালি সার্ভার নির্বাচন করা যায়না।
- মাসিক ডাটা ক্যাপাসিটি মাত্র ১ জিবি।
- ভিপিএনটির ফ্রি ভার্সনটিতে কোন লাইভ চ্যাট সাপোর্ট সিস্টেম নেই। ফলে অসুবিধা হলে সরাসরি জানাতে পারবেন না।
এ ভিপিএন এর পেইড সার্ভিসটি নিতে চাইলে তার জন্য আপনার খরচ করতে হবে মাসিক ৬.৫ ডলার।
ফ্রি ভার্সনটি ডাউনলোড করুনঃ Avira Phanton VPN
৫) Zoog VPN
আপনার নিজের গোপনীয়তা রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য যেসব ফ্রি ভিপিএন রয়েছে তার মধ্যে আপনার জন্য অন্যতম উপযোগী একটি ভিপিএন সিস্টেম হচ্ছে এই Zoog VPN.
সুবিধাঃ
- ভিপিএন সার্ভিসটি আপনার কোনরকম কোন তথ্য নেয়না, শুধু আপনার একটি ইমেইল এড্রেস নেয়। আপনি যদি আপনার প্রকৃত ইমেইল আইডি না দেন তাহলেই আর আপনাকে ট্র্যাক করা কোনভাবেই আর সম্ভব হবে না।
- টরেন্ট ব্যবহার করা যায়। এছাড়াও নরমাল ওয়েবসাইট আনব্লক করা যায়।
- ফ্রি ও পেইড ভার্সনের গতিতে কোন বৈষম্য নেই৷ দুই ভার্সনেই সমান গতিতে কাজ করা যায়।
অসুবিধাঃ
- এটিতে কেবলমাত্র তিনটি সার্ভারে কানেক্ট করা যায়। ফলে সার্ভারে বেশি চাপ পড়ায় কিছুটা ধীরগতির হয়ে যেতে পারে। তবে ভিপিএনটিতে কোন সার্ভারে কিরকম ভীড় তা দেখা যায়, তাই আপনি চাইলে বেশি স্পিড পেতে কম ভীড় এর সার্ভারটিতে কানেক্ট করতে পারেন।
- একসময় একটি একাউন্ট দিয়ে কেবলমাত্র একটি ডিভাইস এই কানেক্ট করা যায়।
- মাসিক ডাটা ক্যাপাসিটি শুধুমাত্র ১০ জিবি।
এই ভিপিএনটির ফ্রি ভার্সনটির সমস্যাগুলো আবার পেইড ভার্সনটিতে নেই। তবে পেইড ভার্সনটির জন্য আপনাকে খরচ করতে হবে মাসে ১.৮৭ ডলার।
ফ্রি ভার্সনটি ডাউনলোড করুনঃ ZoogVpn
৬) Atlas VPN
২০২০ সালে রিলিজ হওয়া এই ভিপিএন সিস্টেমটি ইতিমধ্যেই বিশ্বের সেরা ফ্রি ভিপিএনগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। এটি এর বিভিন্ন সুবিধার কারনে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং আপনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী একটি ফ্রি ভিপিএন সিস্টেম হতে পারে এটি।
সুবিধাঃ
- এতে কোন ডাটা লিমিট নেই। সাধারনত ফ্রি ভিপিএন এ এধরনের সুবিধা দেয়না তবে Altas VPN এ আনলিমিটেড ডাটা ও আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে।
- এতে ফ্রি ভার্সনের ইউজারদের জন্য কোন আলাদা স্পিড লিমিট নেই। পেইড ও ফ্রি উভয় ভার্সনেই ভিপিএন ব্যবহারকারীরা সমান গতি ব্যবহার করতে পারেন।
- এটি আপনার তেমন কোন তথ্য গ্রহণ করে না। তবে ভিপিএন টি ব্যবহারের সময় বিশেষ কোন কোন ক্ষেত্রে আপনার ইমেইল এড্রেস চাইতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনি আপনাকে ট্রেস করা যাবে এমন ইমেইল এড্রেস না দিলেই একদম সুরক্ষিত থাকবেন।
- এর সিকিউরিটি সিস্টেম বেশ উন্নত যা আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর সময় আপনারে ট্র্যাক করা যায় এমন ম্যালওয়্যার ব্লক করবে, পাশাপাশি এর এনক্রিপশন সিস্টেমের কারনে কোন তথ্য লিক হবে না।
অসুবিধাঃ
- অন্যান্য ভিপিএন এর তুলনায়, এর গতি তুলনামূলক একটু কম।
- শুধুমাত্র তিনটি লোকেশনের সার্ভারে কানেক্ট করা যায়।
- ফ্রি ভার্সনে কোন লাইভ চ্যাট অপশন নেই। ফলে ভিপিএনটি ব্যবহারের সময় সমস্যার সম্মুখীন হলে সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন না।
এই ভিপিএনটির পেইড ভার্সনের জন্য আপনাকে প্রতি মাসে খরচ করতে হবে ১.৩৯ ডলার।
ফ্রি ভার্সনটি ডাউনলোড করুনঃ AtlasVPN
৭) Kaspersky VPN
রাশিয়ান এই ভিপিএনটি বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মূলত এর দ্রুতগতিই এর এত জনপ্রিয় হয়ে উঠার কারন। তাই আপনার জন্য ও আদর্শ এক ভিপিএন হতে পারে এটি।
সুবিধাঃ
- ভিপিএন টি বেশ দ্রুতগতির। এর গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৯৬ মেগাবাইট। এতে গতিতে কোন বৈষম্য নেই অর্থাৎ পেইড ও ফ্রি উভয় ভার্সনেই ইউজার রা এই গতিতে ভিপিএনটি ব্যবহার করতে পারেন।
- ১৮ টি দেশের সার্ভারে কানেক্ট করা যায়। তাই ইউজারদের কাছে অনেক বেশি অপশন থাকে কোন সার্ভারে কানেক্ট করবে যাতে তারা নিজেদের জন্য সেরা সার্ভিসটি পেতে পারে।
- বিশ্বব্যাপীই এই ভিপিএনটিতে ভালো স্পিড পাওয়া যায়।
- টরেন্ট ব্যবহার করা যায়।
- এটি বেশ ইউজার ফ্রেন্ডলি অর্থাৎ সহজেই বিভিন্ন ডিভাইস এ ব্যবহার করা যায়৷ অত জটিল সেটিংস নেই এতে।
- ভিপিএনটির কয়েকটি সার্ভার বিভিন্ন OTT প্লাটফর্মের রিজিওনাল রেস্ট্রিকশন কে আনব্লক করতে পারে।
অসুবিধাঃ
- এটি অন্যান্য ভিপিএন এর তুলনায় আপনার থেকে বেশি তথ্য গ্রহণ করে থাকে। যা গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে সামান্য অসুবিধাজনক।
- ফ্রি ভার্সনে এর ডাটা ক্যাপাসিটি প্রতিদিন মাত্র ২০০ এমবি। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম।
- এর কোন লাইভ চ্যাট সাপোর্ট সিস্টেম নেই। ভিপিএন ব্যবহার করার সময় কোন অসুবিধা হলে ফোন কল কিংবা ইমেইল করতে হবে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রাখতে চান যারা তাদের জন্য অসুবিধাজনক।
ভিপিএনটির আরো অনেক সুবিধা পেতে পেইড ভার্সনটির জন্য আপনাকে প্রতিমাসে খরচ করতে হবে ২.৫ ডলার।
ফ্রি ভার্সনটি ডাউনলোড করুনঃ KasperskyVPN
৮) Tunnelbear VPN
এই ভিপিএনটিও সারাবিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় এবং খুব সহজে ব্যবহার করা যায়।
সুবিধাঃ
- এই ভিপিএনটি সব ধরনের ডিভাইসেই ব্যবহার করা সম্ভব।
- ভিপিএনটি খুবই ইউজার ফ্রেন্ডলি অর্থাৎ সহজে ব্যবহার করা যায়।
- ২৩ টি দেশে এর সার্ভার রয়েছে।
- এর সিকিউরিটি সিস্টেম খুব উন্নত যা আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর সময় অ্যাড ও ম্যালওয়ার যাতে আপনাকে ট্র্যাক করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে পারবে।
- টরেন্টিং করা যায়।
অসুবিধাঃ
- এটিতে ফ্রি ভার্সনে ডাটা ক্যাপাসিটি মাত্র ৫০০ এমবি। এটি খুবই কম। সফটওয়্যার ট্রায়াল এর জন্য বা নিজের নিরাপত্তার জন্য সাময়িক ব্যবহার করা যেতে পারে তবে রেগুলার ইন্টারনেট ব্যবহার এর জন্য এই ভিপিএনটি ভালো নয়।
এটির পেইড ভার্সনটির জন্য আপনাকে গুনতে হবে মাসিক ৩.৩৩ ডলার।
ফ্রি ভার্সনটি ডাউনলোড করুনঃ TunnelbearVPN
৯) Hotspot Shield VPN
বিশ্বব্যাপী ৬৫০ মিলিওন গ্রাহক এর কারনে নিঃসন্দেহে Hotspot Shield কে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভিপিএন বলা যায়।
সুবিধাঃ
- ফ্রি ভিপিএনগুলোর মধ্যে এটি বেশ দ্রুতগতির।
- এর বিশ্বব্যাপী ১৮০০ এর ও অধিক সার্ভার রয়েছে। যা ৮২ টি দেশে বিস্তৃত। তাই ব্যবহারকারীর কাছে কোন সার্ভারে কানেক্ট করবে তার অনেক অপশন থাকবে।
- টরেন্ট ব্যবহার করা যায়।
- এটি ডিভাইসে ব্যবহার করা খুব সহজ অর্থাৎ ইউজার ফ্রেন্ডলি। এটির বিশ্বব্যাপী এত জনপ্রিয় হওয়ার এটিও অন্যতম একটি কারন।
- এর ডাটা ক্যাপাসিটি প্রতিদিন ৫০০ এমবি।
অসুবিধাঃ
- এই অ্যাপটি বিজ্ঞাপন দেখাবার মাধ্যমে আয় করে থাকে। যা বিরক্তির কারন হতে পারে। পাশাপাশি এর কারনে বিজ্ঞাপনদাতার কাছে আপনার কিছু তথ্য চলে যেতে পারে।
এই ভিপিএনটির পেইড ভার্সনের জন্য আপনাকে মাসিক খরচ করতে হবে প্রায় ৩ ডলার।
ডাউনলোড করুনঃ Hotspotshield
১০) Speedify VPN
পশ্চিমা বিশ্বে এই ভিপিএনটি বেশ জনপ্রিয়। এর নাম থেকেই বোঝা যায়, এই অ্যাপ নির্মাতাদের উদ্দেশ্য ছিলো যাতে ভিপিএন ব্যবহারের সময়ে আপনি ভালো গতি পেতে পারেন। তাই এটি আপনার জন্য উপযুক্ত একটি ভিপিএন হতে পারে।
সুবিধাঃ
- Speedify ভিপিএন অন্যান্য ভিপিএনের তুলনায় বেশ দ্রুতগতি সম্পন্ন।
- ভিপিএনটির প্রাইভেসি পলিসি বেশ ভালো এবং তারা কি কি তথ্য রাখে ব্যবহারকারীদের তা স্বচ্ছতার সাথে জবাবদিহি করে থাকে।
- এর সিকিউরিটি সিস্টেম বেশ উন্নত। এটি আপনি পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা বজায় রাখতে সক্ষম।
- এটি আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং এর গতি অনেকাংশে বাড়িয়ে দিতে পারে। কিন্তু অঞ্চল থেকে নির্দিস্ট ওয়েবসাইট খুব ধীরে লোড হয় কিংবা গেমে Ping অনেক বেশি থাকে বিধায় অসুবিধার সৃস্টি হয়। এসকল অসুবিধা এই Speedify ভিপিএনটি সমাধান করে দেয় যার ফলে আপনি বাধাহীনভাবে গেম খেলতে পারেন বা কোন ওয়েবসাইট এ ব্রাউজ করতে পারেন।
অসুবিধাঃ
- এটি সার্ভার ম্যানুয়ালি সিলেক্ট করতে দেয়না। এটি অটোমেটিকভাবে ওই মূহুর্তের সবচেয়ে দ্রুত সার্ভারে আপনাকে কানেক্ট করিয়ে দিবে।
- এর মাসিক ডাটা ক্যাপাসিটি ১০ জিবি। অবশ্য এটি ফ্রি ভিপিএন হিসেবে অতটাও মন্দ নয়।
এই ভিপিএনটি ক্রয়ের জন্য আপনাকে মাসিক খরচ করতে হবে ৯.৯ ডলার। তবে ১-৩ বছর ব্যাপী প্যাকেজগুলো এর মূল্য অনেক কম।
ভিপিএনটি ডাউনলোড করুনঃ Speedify
ভিপিএন ব্যবহারে সতর্কতা
ভিপিএন যেহেতু নিজেদের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সহ অন্যান্য সুবিধা পেতে ব্যবহার করা হয়, তাই ভিপিএন এর ফলে যাতে এসবের কোনটির বিঘ্ন না ঘটে বা কোন ক্ষতি না হয়ে যায় সেজন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমনঃ
- অনেকগুলো ফ্রি ভিপিএন মার্কিন যুক্তরাস্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি বেসড। এসব দেশ Five Eyes Alliance ও 14 Eyes Alliance চুক্তিতে আবদ্ধ। এটি মূলত সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স শেয়ার করার একটি চুক্তি যা সরকারিভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তাই এসব দেশ ভিত্তিক ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করলে এসব দেশের সরকার কর্তৃক তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার এবং অন্য দেশের কাছে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা একদম এড়িয়ে যাওয়া যায়না। যারা চান নিজের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বজায় রাখতে তাদের জন্য উচিত হবে 5 Eyes ও 14 Eyes Alliance এর সদস্য এরূপ দেশভিত্তিক ভিপিএন ব্যবহার না করা।
- বিশ্বাসযোগ্য সূত্র ছাড়া যেকোন ভিপিএন ব্যবহার করা কখনোই উচিত হবেনা। ভিপিএন ইনস্টল করার পর স্বাভাবিকভাবেই আপনাকে সেই ভিপিএনকে আপনার নেটওয়ার্ক কন্ট্রোলসহ বেশ কিছুর পারমিশন দিতে হয়, তাই ভিপিএনটির নিরাপদ হওয় জরুরি। যদি ভিপিএনটি প্রকৃতপক্ষে কোন অসাধু উদ্দেশ্যে বানানো ম্যালওয়্যার হয়ে থাকে তবে তা আপনার তথ্যাদি চুরি সহ নানাবিধ ক্ষতি করতে পারে। তাই বিশ্বস্ত ও বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ভিপিএনগুলোকেই শুধু ব্যবহার করা উচিত।
- যেসকল ভিপিএন নিয়ে আপনি নিশ্চিত, সেসব ভিপিএন এর ও যেকোন ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করা ঝুঁকির কারন হতে পারে। তাই শুধুমাত্র অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে কিংবা গুগল প্লে স্টোর/ অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করে ভিপিএন ইনস্টল করা উচিত।
- যেহেতু ভিপিএন ব্যবহারের উদ্দেশ্য আপনার নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বজায় রাখা, সেক্ষেত্রে যেকোন ভিপিএন ব্যবহারের পূর্বে এর প্রাইভেসি পলিসি ভালো করে পড়ে নেওয়া প্রয়োজন। যদি কোন ভিপিএন আপনার প্রয়োজনের চেয়ে বেশি তথ্য নেয় সেই ভিপিএন ব্যবহার না করাই ভালো।
- ভিপিএন অ্যাপটিকে কি কি পারমিশন দিচ্ছেন তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভিপিএন শুধুই নেটওয়ার্ক সংযোগ সংক্রান্ত পারমিশন ই চাইবে, আপনার গ্যালারি বা মেমরিতে কি আছে তার বা অন্য কোন অ্যাপ নিয়ন্ত্রনের এক্সেস চাইবে না। তাই পারমিশন দেওয়ার আগে সতর্ক থাকতে হবে।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
ফ্রি ভিপিএন কি নিরাপদ?
উত্তরঃ পৃথিবীতে কোনকিছুই একেবারে বিনামূল্যে দেওয়া হয়না, এর কোন না কোন উদ্দেশ্য থাকেই। যেসব ফ্রি ভিপিএন পুরোপুরি ফ্রি হওয়ার দাবী করে অর্থাৎ এদের আয় নিয়ে কোন নিশ্চিত তথ্য নেই, তা আপনার জন্য নিরাপদ নয়। কারন তারা আপনার তথ্য বিক্রি করে আয় করে থাকে। এসব ভিপিএন ব্যবহার না করাই উত্তম। তবে প্রায় সকল ফ্রি ভিপিএন ই স্বীকার না করলেও এরকম কিছু তথ্যাবলি রেখে ব্যবসা করার ঘটনা ঘটতে পারে। সাধারন ব্যবহারের জন্য ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার ঠিক আছে কিন্তু প্রফেশনাল কাজের জন্য এই ঝুঁকি নেওয়া কোনমতেই উচিত হবে না। সেক্ষেত্রে পেইড ভিপিএন ব্যবহার করাই উত্তম।
ভিপিএন ব্যবহার করলে কি মোবাইলে ভাইরাস প্রবেশ করে?
উত্তরঃ সাধারনত এমনটি হওয়ার কথা নয়। আপনি যদি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ও বিশ্বাসযোগ্য কোন ভিপিএন সিস্টেম ব্যবহার করেন তাদের অ্যাপের মাধ্যমে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে ভাইরাস প্রবেশ করবে না। তবে অখ্যাত ও ঝুঁকিপূর্ণ ভিপিএন অ্যাপ ডাউনলোড করলে তাতে মোবাইল ভাইরাল থাকার সম্ভাবনা থাকে ও সেক্ষেত্রে তা আপনার মোবাইল এর অনেক তথ্যাদি চুরি ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে৷ তাই নিশ্চিত না হয়ে ভিপিএন কিংবা কোন অ্যাপই মোবাইলে ইনস্টল করা উচিত নয়।
ভিপিএন কিভাবে ইনস্টল ও ব্যবহার করবো?
উত্তরঃ যে ভিপিএন ব্যবহার করতে চান সে ভিপিএনটির অফিশিয়াল সাইট বা গুগল প্লেস্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করবেন। এরপর তা ইনস্টল করে প্রাইভেসি পলিসি ভালোভাবে পড়ে অ্যাপটিকে প্রয়োজনীয় পারমিশন প্রদান করবেন। এরপর ভিপিএন এর নির্দিস্ট সার্ভারে কানেক্ট করার অপশনে প্রেস করে ভিপিএন এর সাথে কানেক্টেড হবেন। ইন্টারনেট ব্যবহারকালীন ভিপিএন অ্যাপটি যাতে ব্যাকগ্রাউন্ড এ রানিং থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ