উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের মাঝে অ্যাপথাস আলসার দেখা যেতে পারে মানসিক চাপের কারণে। এছাড়া সুষম খাবারের অভাবে বা ঘুম ঠিকভাবে না হলেও অ্যাপথাস আলসার হতে পারে। অ্যাপথাস আলসার একটি ছোট ব্যাথাযুক্ত মুখের আলসার বা ঘাঁ যা আনুমানিক ২-৫ মি.মি. ডায়ামিটার আকৃতির হয়ে থাকে। এটি সাধারণত ৫-৭ দিন থাকে এবং আলসার বা ঘাঁ ২ সপ্তাহের মধ্যে শুকিয়ে যায়। যাদের বার বার অ্যাপথাস আলসার হয় তাদের ক্ষেত্রে ভিটামিন বি১২ কার্যকর ভূমিকা রাখে। কিন্তু আমাদের দেশে বুঝে না বুঝে রোগীরা ভিটামিন সেবন করে থাকেন যা মোটেই ঠিক নয়।
কোল্ড সোর আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষের কাছে জ্বরঠোসা নামে পরিচিত। জ্বরঠোসায় সাধারণত ব্যাথা হয়ে থাকে এবং জ্বালাপোড়া থাকে। চুলকাতেও পারে। সাধারণত ঠোটে বেশি দেখা যায়। কোল্ড সোর হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস টাইপ-১ দ্ধারা হয়ে থাকে। অ্যাপথাস আলসার বা ক্যানকার সোর কেবল মাত্র মুখের ভিতরে হয়। আর কোল্ড সোর বা জ্বরঠোসা অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুখের বাহিরে হয়। তবে মাঝে মাঝে মুখের ভিতরে হয়। কিন্তু কেবল মাত্র শক্ত স্থানে যেমন মুখের অভ্যন্তরে তালুতে বেশী হয়ে থাকে। অ্যাপথাস আলসার ভাইরাস দ্বারা হয় না কিন্তু কোল্ড সোর বা জ্বরঠোসা ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। তাই যারা কোল্ড সোরে আক্রান্ত তাদের খাবার গøাস, প্লেট ও কাপ আলাদা থাকা উচিত। অ্যাপথাস আলসার ওরাল টিস্যু ধ্বংসের মাধ্যমে হয়ে থাকে, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সোডিয়াম লরিল সালফেট দ্বারা হয়ে থাকে। কোল্ড সোরের ক্ষেত্রে প্রথম লক্ষনই হলো বিøষ্টারের আবির্ভাব হওয়া। অ্যাপথাস আলসার একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায় না। কিন্তু কোল্ড সোর বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। তাই মুখের অভ্যন্তরে যে কোনো স্থানে বা ঠোঁটে আলসার বা ঘাঁ দেখা দিলে মুখস্ত ভিটামিন, মলম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার মুখের ঘাঁ কি ধরণের অর্থাৎ রোগ নির্ণয় করার পরই যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।তবে এটি ছাড়াও মুখের ভেতরের আলসার বা ছাল উঠে যাওয়ার সমস্যা কমানোর আছে কিছু উপায়। জেনে নিন, কী সেই উপায়গুলো-
হলুদ-পানি
দুই টেবিল চামচ হলুদের গুঁড়া ও এক টেবিল চামচ পানি নিন। এবার এই দুই উপাদান দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে নিন। মুখের ভেতরে যেখানটাতে ছাল উঠে গেছে, সেখানে লাগিয়ে নিন। এভাবে মিনিট পাঁচেক রেখে দিতে হবে। এরপর কুলকুচি করে নিন বা দাঁত মেজে নিন। এক্ষেত্রে নরম ব্রাশ ব্যবহার করবেন।
সাধারণত মুখের ভেতর বাসা বেঁধে থাকা জীবাণুর কারণে মাউথ আলসার হয়। হলুদ এমন একটি উপকারী ভেষজ যা সব ধরনের জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং সারাতে সাহায্য করে। মাউথ আলসার সারাতে দিনে দুইবার করে হলুদের পেস্ট ব্যবহার করুন। এতে অল্পদিনের মধ্যেই মিলবে মুক্তি কিছুদিনের মধ্যেই সমস্যার সমাধান হবে।
লবণ-পানির ব্যবহার
এক টেবিল চামচ লবণ ও আধা গ্লাস হালকা গরম পানি নিন। এবার পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করুন বা গার্গল করুন। লবণ-পানি শেষ হয়ে গেলে সাধারণ পানিতে আরেকবার কুলকুচি করে নিন। মুখের ভেতরে ছাল উঠে গেলে বেশিরভাগ মানুষই প্রথমে অবহেলা করেন। এর ফলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে অনেকটা জায়গাজুড়ে। লবণ-পানি অ্যান্টিসেপ্টিকের কাজ করে তাই এটি মাউথ আলসার বাড়তে দেয় না। এতে কষ্টও কমে অনেকটা। উপকার পেতে দিনে দুই-তিনবার লবণ-পানি ব্যবহার করুন।
হারবাল টুথপেস্ট
যেকোনো ভালো ব্র্যান্ডের হারবাল টুথপেস্ট এবং একটি কিউ টিপ বা কটন বাড নিন। সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কটন বাডে টুথপেস্ট নিয়ে মুখের ভিতরে যেখানে ছাল উঠেছে, সেখানে ব্যবহার করুন। অন্তত পাঁচ মিনিট রেখে কুলকুচি করে নিতে হবে। টুথপেস্ট ব্যবহারের পর সামান্য জ্বালা করতে পারে, এতে ভয় পাবেন না। কারণ কিছুক্ষণ পরই জ্বালাভাব কমে যাবে। হারবাল টুথপেস্টে অ্যান্টি-মাইক্রোব্যাক্টেরিয়াল প্রপারটিস থাকে তাই মাউথ আলসার সারাতে টুথপেস্ট খুব ভালো ঘরোয়া টোটকা হিসেবে কাজ করে। দিনে দুইবার করে কটন বাড দিয়ে টুথপেস্ট লাগালে সপ্তাহখানেকের মধ্যেই আরাম পাবেন।