ছাগল পালনের !!

 

সুবিধা

  • অল্প পুঁজি এবং অল্প জায়গাতে খুব সহজেই ছাগল পালন করা যায়।
  • অন্যান্য পশুর তুলনায় রোগবালাই কম হয়।
  • ৭-৮ মাসের মধ্যে বাচ্চা প্রসব করে।
  • দুধ, মাংস, চামড়ার ব্যাপক চাহিদা।
  • খাবার কম প্রয়োজন হয়।
  • অল্প পুঁজিতে অধিক লাভ।
  • ছাগল ছোট প্রাণি হওয়ার কারণে ছোট ছেলেমেয়েরাও সহজেই পালন করতে পারে।
  • গরুর তুলনায় কম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়।
  • গরু মহিষ যেসব পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না, ছাগল সেখানে সহজেই পারে।
  • ছাগলের মাংস পুষ্টিকর ও সুস্বাদু এবং বাণিজ্যিকভাবে অধিক লাভজনক।
  • ছাগলের চামড়ার মধ্যে ব্ল্যাক বেঙ্গল উন্নত এবং বিদেশেও প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
  • চামড়া বিক্রি করে সহজেই বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়।

ছাগলের প্রজাতি নির্বাচন বা ছাগল কেনার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়সমূহ

ছাগলছাগল পালনের পূর্বে আপনাকে সর্বপ্রথম ছাগলের প্রজাতি সঠিকভাবে নির্বাচন করে নিতে হবে। চাহিদাভেদে আপনার ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ছাগল নির্বাচন করতে হতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী ছাগলের বিভিন্ন জাত রয়েছে। যেমনঃ

  1. স্যানিন (Saanen)
  2. লা-মাঞ্চা (La Mancha)
  3. নিউবাইন (Nubain)
  4. কিকো (Kiko)
  5. ব্ল্যাক বেঙ্গল (Black Bengal), ইত্যাদি।

ছাগলের প্রজাতি নির্বাচনের পর আপনাকে ছাগলের বয়স, গঠন, বংশ, ইত্যাদি বিষয়সমূহের দিকে নজর রাখতে হবে যেনও নির্বাচিত ছাগল সঠিকভাবে উৎপাদন করতে পারে, নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে। এছাড়াও কিছু বিবেচ্য বিষয়সমূহ রয়েছে।

ছাগল কেনার বিবেচ্য বিষয়সমূহ

পাঠার ক্ষেত্রেঃ

  • ১২ মাস বয়সের মধ্যে পাঠা নির্বাচন করতে হবে।
  • পাঠার পেছনের পা ভালো করে দেখে নিতে হবে যেনও শক্তিশালী হয়।
  • পাঠার বংশ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিতে হবে।

ছাগীর ক্ষেত্রেঃ

  • ছাগী নির্বাচন করতে হবে আকারে বড় এবং উৎপাদনশীল বংশের।
  • ৯-১২ মাস বয়সের মধ্যে হলে ভালো হয়।
  • ছাগীর ওলান যেনও সুগঠিত ও বাঁট সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।

ছাগলের আবাসস্থল নির্বাচন

ছাগল সাধারণত দুই পদ্ধতিতে পালন করা যায়, যেমনঃ

  1. আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন
  2. অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন

আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন

আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালনছাগলের আবাসস্থল নির্বাচনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে, ঘরে যেনো জল না জমে এবং শুষ্ক ও উচুঁ হয়। রোদ এবং ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে কাঠ, বাঁশ, ছন, টিন ও গোলপাতা দিয়ে অল্প খরচে ঘর তৈরি করা যেতে পারে। ১ বর্গমিটার (১০ বর্গফুট) জায়গা সাধারণত একটি প্রাপ্ত বয়স্ক ছাগলের জন্য যথেষ্ট। এছাড়াও মেঝে যেনও স্যাঁতসেঁতে না হয়ে যায় এজন্য সঠিকভাবে মাচা তৈরি করতে হবে।

ছাগল সাধারণত খোলামেলা এবং পরিষ্কার জায়গায় থাকতে পছন্দ করে, এজন্য ১ জোড়া ছাগলের ৫ ফুট লম্বা, এবং ১.৫ ফুট চওড়া এবং ৬ ফুট উচ্চতায় খোঁয়াড় প্রস্তুত করলে ভালো হয়ে থাকে।

বৃষ্টির পানি যেনও ঘরে না জমে এজন্য ঘরে জল নিষ্কাশনের সঠিক বাবস্থা করে দিতে হবে এবং মল-মূত্র নিষ্কাশনের জন্য বাঁশ বা কাঠে ১১সেঃ মিঃ ফাঁকা রাখলে ভালো হয়। এছাড়াও ঠাণ্ডার হাত থেকে রক্ষার জন্য মাচার উপর ১.৫” খড় বিছিয়ে দিতে হবে।

তবে নতুন ছাগলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে আবদ্ধ না রেখে অল্প আবদ্ধ রেখে তাদের বিচরণ কমাতে হবে যেনও নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে বা খাদ্য গ্রহণে কোন রকম সমস্যা না হয়।

অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন

অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালনঅর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে ছাগল পালন বলতে দিনের অর্ধেক সময় মাঠে বিচরণ করতে দেয়া হয়, এবং বাকি অর্ধেক সময় খামারে দানাদার খাদ্য দেয়া হয়ে থাকে। বর্ষাকালে যখন বিচরণ করতে দেয়া সম্ভব হয় না তখন আবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়ে থাকে এবং ঘাস ও দানাদার খাদ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

ছাগলের প্রতিপালন এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনা

ছাগলের প্রতিপালন এবং খাদ্য ব্যবস্থাপনাশুধুমাত্র ঘাস খাওয়ানোর মাধ্যমে ছাগলের সঠিক পুষ্টির অভাব পূরণ করা সম্ভব নয়, এজন্য এর পাশাপাশি খড়, ভুষিসহ আরও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। প্রতিদিন একটি ছাগলকে ২৫০-৩০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য দিতে হবে।

১০ কেজি দানাদার খাদ্যের মিশ্রণে যেসব উপাদান থাকা প্রয়োজনঃ

চাল ভাঙ্গা ৪ কেজি
ঢেঁকি ছাঁটা চালের কুড়া ৫ কেজি
খেসারি বা অন্য কোনো ডালের ভূষি ৫০০ গ্রাম
ঝিনুকের গুড়া ২০০ গ্রাম
লবণ ৩০০ গ্রাম

এছাড়াও ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করে খড় খাওয়ালে আমিষের পরিমাণ ভালো থাকে এবং খাবার পরিপাকেও সুবিধা হয়। একটি ছাগলের বাচ্চা ২-৩ মাসের মধ্যে দুধ ছাড়ে এবং এর মধ্যেই ভালো মানের সবুজ ঘাস (কচি) এবং দানাদার খাদ্যের সরবরাহ করতে হবে।

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যছাগল পালনের ক্ষেত্রে ছাগলের স্বাস্থ্যের দিকে খুব ভালভাবে নজর দিতে হয়। নিয়মিত টিকাদান করতে হবে যেনও উৎপাদনে কোন ব্যাঘাত না ঘটে। সুস্থ একটি ছাগলের সাধারণত প্রতি মিনিটে ৭০-৯০ বার নাড়ীর স্পন্দন, প্রতি মিনিটে ২৫-৪০ বার শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ৩৯.৫ সেঃ তাপমাত্রা হয়ে থাকে।

ছাগল সুস্থ রাখতে যেসব ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা আবশ্যকঃ

ছাগলকে সুস্থ রাখতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে যেমনঃ

টিকা প্রদান

বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের টিকা যেমনঃ গোটপক্স, পিপিআর, ক্ষুরারোগ ইত্যাদি এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যেমনঃ ব্রুসেলোসিস, এনথ্রাক্স, ইত্যাদি খুবই মারাত্মক। এজন্য এগুলোর বিরুদ্ধে সময় মতো টিকাদান করা জরুরী।

কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ

পশু চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে খামারের সকল ছাগলকে পরিমাণমতো বছরে ২ বার কৃমিনাশক ওষুধ প্রদান করতে হবে।

ছাগলের রোগ দমন

ছাগলের রোগ দমনছাগল পালনের ক্ষেত্রে যেমন খাবার বাসস্থানের দিকে নজর দিতে হবে ঠিক তেমনই ছাগলের রোগ দমনের দিকেও নজর দিতে হবে। ছাগলের ঘরে সবসময় আলো-বাতাসের ব্যবস্থা রাখতে হবে কা্রণ ছাগল সব সময়ই পরিষ্কার থাকতে ভালবাসে। এজন্য উঁচু স্থান নির্বাচন করতে হবে যেন জল বা নোংরা জমে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি না হয়ে যায়। মেঝেতে খড় বিছিয়ে দেয়া যেতে পারে, এবং শীত থেকে রক্ষার জন্য দেয়ালে বস্তা টেনে দিলে ভালো হয়।

নিচে ছাগলের কিছু সুপরিচিত রোগের কারণ দেয়া হল:

  • ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগঃ ডায়রিয়া, গলাফুলা ইত্যাদি
  • ভাইরাসজনিত রোগঃ নিউমোনিয়া, পি.পি.আর ইত্যাদি
  • পরজীবীজনিত রোগঃ গোলকৃমি, ফিতাকৃমি ও পাতাকৃমি, চামড়ার মধ্যে উকুন

এসকল রোগ দমনের ক্ষেত্রে খুব ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে, না হলে বড় পরিমাণে ক্ষতির আশঙ্কা করা যেতে পারে। প্রয়োজনে কৃষি অধিদপ্তরের সহায়তা নিন এবং সঠিক নিয়মকানুন মেনে চলুন।

ছাগলের দুধ দোহন

ছাগলের দুধ দোহন দুধ দোহনের জন্য আপনাকে সঠিক সরঞ্জাম এবং দোহন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিতে হবে, এক্ষেত্রে আপনার এলাকার কৃষি কর্মকর্তার সাহায্য নিতে পারেন, একটি ছাগী বাচ্চা প্রসব করার ১০ মাস পর্যন্ত দুধ দোহন করা যায়। তারপর তার স্বাস্থ্যগত অবস্থার দিক বিবেচনা করে তাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিশ্রাম দিতেই হবে। একটি ছাগী থেকে দিনে দুইবার দুধ দোহনের মাধ্যমে ১ গ্যালন দুধ পাওয়া যেতে পারে। তবে কৃষি কর্মকর্তার সাহায্য অনুযায়ী সঠিক নিয়ম মেনে চলতে হবে।

ছাগল গর্ভকরণ

ছাগলের বংশবিস্তার করার জন্য পুরুষ ছাগলকে ছাগির বিশ্রামকালীন সময়ে এর থেকে দূরে রাখতে হবে কারণ গর্ভচক্র ও দোহনচক্রের মাঝামাঝি সময়ে প্রজননক্ষমতা যেন বৃদ্ধি পায়। যা একটি ছাগির সার্বিক সুস্থতা ও প্রজননস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বংশবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ছাগল পালন করুন আর দুধ উৎপাদনের জন্যই করুন, ছাগলকে যেখানে সেখানে ছেড়ে না দেয়াটাই ভালো, কারণ সুন্দর এবং পরিষ্কার পরিবেশে ছাগল পালনের মাধ্যমে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে দূরে থাকা যায়।

বাজারজাত করার সময়

ছাগল বাজারজাতকরনছাগল পালনের সফলতা মুলত নির্ভর করে উপযুক্ত দামের উপরে, এজন্যই বাজার অনুযায়ী যেখানে তুলনামূলক অধিক মূল্য পাওয়া যাবে সেখানেই বিক্রয় করতে হবে। তবে বেশি মূল্যের আশায় ছাগলদের অধিক পথ ভ্রমণের কারণে ধকলজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, এবং এটি ক্ষতির কারণ হতে পারে, কাজেই ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ না করাই ভালো।

নবীনতর পূর্বতন