ক্রিকেট খুবই নিয়মকানুন ও মাপযোগের খেলা। প্রায় সকল কিছুতেই একেকরম মাপ পরিমাপ থাকে। ক্রিকেট মাঠেই একেক অংশে একেকরম মাপ রয়েছে।
পিচ : ক্রিকেট মাঠে প্রধান অংশ হচ্ছে পিচ। পুরু পিচ ৭৪ ফুট লম্বা ও ১২ ফুট প্রস্থ।
মূল পিচ : (স্টাম্প টু স্টাম্প) লম্বায় ২২ গজ (৬৬ ফুট), প্রস্থ হচ্ছে ১০ ফুট।
বোলিং ক্রিজ : পিচের মাথা থেকে ৪ ফুট সামনে স্টাম্প পর্যন্ত দাগ দেয়া ক্রিজই বোলিং ক্রিজ। দুই বোলিং ক্রিজের মাঝের দুরত্ব ৫৮ ফুট।
পপিং ক্রিজ : ব্যাটিং করার ক্রিজকে পপিং ক্রিজ বলে। স্টাম্প থেকে ৪ ফুট সামনে অংকিত দাগ পর্যন্ত ক্রিজই ব্যাটিং ক্রিজ । পপিং ক্রিজের প্রস্থ ৮ ফুট ৮ ইঞ্চি। পপিং ক্রিজের সামনে থেকে ব্যাটের সময় স্টাম্পিং হলে ব্যাটসম্যান আউট হয়। দুইটা ব্যাটিং ক্রিজের মাঝের দুরত্ব ৫৮ ফুট।
রিটার্ন ক্রিজ : চারটি রিটার্ন ক্রিজ থাকে। বোলিং ক্রিজের সাথে লম্বালম্বিভাবে থাকে। পিচের মাথা থেকে ৮ ফুট দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রিটার্ন ক্রিজ থাকে পপিং ক্রিজ পর্যন্ত। রিটার্ন ক্রিজে পা ফেললে বোলারের বল “নো বল” ডাকা হয়। রিটার্ন ক্রিজের বাহিরে গিয়ে বোলিং করা যায়না।
ক্লোজড ইনফিল্ড :- স্ট্রাইক ব্যাটসম্যান থেকে ১৫ গজ (৪৫ ফুট) দুরত্বে যে সীমানা থাকে সেটুকুকে ক্লোজড ইনফিল্ড বলে।
ইনফিল্ড : ৩০ গজ (৯০ ফুট) দুরত্বে যে বৃত্ত আকা থাকে মাঠে সেটুকু অঞ্চলকে ইনফিল্ড বলে।
আউটফিল্ড : ৩০ গজের বাহিরে বাকি মাঠকে আউটফিল্ড বলে।
কিভাবে শুরু হয়ঃ ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি কীভাবে ও কোথায় হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলা খুবই কঠিন। তবে এটুকু অনুমান করা যায় যে, এই খেলা ইংল্যান্ডে প্রথম আরম্ভ হয়েছিল। 1775 সালে ইংল্যান্ডের মেলবাের্ন ক্রিকেট ক্লাব (MCC) গঠিত হয়। 1877 সালে মেলবাের্ন-এর মাঠে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে প্রথম টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। 1909 সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দপ্তর (ICC) গঠিত হয়। এর সদর দপ্তর দুবাই। 1927 সালে দিল্লিতে ভারতীয় ব্রিকেট কন্ট্রোল বাের্ডের উৎপত্তি হয়। বর্তমানে 5 দিনের টেস্ট ক্রিকেট, 50 ওভারের সীমিত ক্রিকেট ও 20 ওভারের T-20 আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রচলিত আছে।
নিয়ম কানুন :-
1. ক্রিকেট খেলার পিচ 20.12 মিটার (22 গজ) লম্বা এবং 3.05 মিটার চওড়া হয়। এই পিচের
ঠিক মাঝখান থেকে 65 গজ থেকে 75 গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত টানা হয়। এটিই হল ক্রিকেট মাঠ। পিচের 20.12 মিটার ব্যবধানে দপ্রান্তে ওটি করে উইকেট পোঁতা থাকে। বোলিং ক্রিজ 2.64 মিটার (৪ ফুট ৪ ইঞ্চি) লম্বা হয়। বালিং ক্রিজ থেকে 1.22 মিটার দূরে এবং বোেলিং ক্রিজের সমান্তরাল বরাবর 3.66 মিটার দাগ টানা থাকে যাকে পপিং ক্রিজ বলে। পপিং ক্রিজের মাঝখানে তিনটি করে দুদিকে 6টি স্ট্যাম্প লাগানাে থাকে। পপিং ক্রিজ থেকে 2.44
মিটার পিচের ভিতরের দিকে অর্থাৎ বােলিং ব্রিজ থেকে 1.22 মিটার দূরের অংশকে রিটার্ন
ক্রিজ বলে। রিটার্ন বক্লিজ 2.64 মিটার লম্বা ও 1.22 মিটার চওড়া হয়।
2. দুই সেট উইকেট বিপরীত মুখে 20.12 মিটার দূরে পিচের দুই প্রান্তে লাগান থাকে। প্রতি সেট
উইকেট 22.86 সেমি চওড়া হয় এবং তা তিনটি কাঠের স্ট্যাম্প দ্বারা গঠিত হয়। প্রতিটি
স্ট্যাম্প বা উইকেট মাটি থেকে 71.1 সেমি (28 ইঞ্চি) উচ্চতাবিশিষ্ট হয়। তিনটি উইকেটের
মাঝে দুটি বেল ওপর দিকে সংযুক্ত থাকে। প্রতিটি বেল 11.1 সেমি লম্বা হয়।
3. ক্রিকেট বলের ওজন কখনােই 163 গ্রামের বেশি ও 155.9 গ্রামের কম হয় না। বলের
পরিধি 22.4 সেমি থেকে 22.9 সেমির (৪ থেকে 9 ইঞ্চি) মধ্যে হয়। মহিলাদের ক্ষেত্রে
বলের ওজন 140 গ্রাম থেকে 151 গ্রাম ও পরিধি 21.0 সেমি থেকে 22.5 সেমি হয়।
4. ক্রিকেট ব্যাট 96.5 সেমি (38 ইঞ্চি) লম্বা ও 10.8 সেমি (4 ইঞ্চি) চওড়া হয় এবং তা কাঠের
নির্মিত হয়। ব্যাটের ওজনের কোনাে সীমাবদ্ধতা নেই।
5. ক্রিকেট খেলায় প্রতি দলে 11 জন করে খেলােয়াড় থাকে, যার মধ্যে একজন দলনায়ক ও
একজন উইকেটরক্ষক থাকে। চোট বা অসুস্থতা কারণে কোন খেলােয়াড় খেলতে অসমর্থ হলে তার বদলে অতিরিক্ত খেলােয়াড় মাঠে নামানাে যেতে পারে, তবে সে শুধুই ফিল্ডিং করতে পারবে। অসুস্থতা বা আঘাতজনিত কারণে কোনো ব্যাটস্ম্যান দৌড়াতে অসমর্থ হলে একজন রানার ব্যবহার করা যেতে পারে।
6. অ্যাম্পায়ার প্লে উচ্চারণের সঙ্গে খেলা শুরু হবে এবং ঢাইম" উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে উইকেটের বেল তুলে খেলা শেষ হবে।
7. নাে বলের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত আডট হতে পারে যথা হিট দ্য বল টোয়াইস', 'রান আউট হ্যান্ডলড দ্য বল এবং অবস্ট্রাক দ্য ফিল্ড'।
8. ফিল্ডিং দলের ব্যবহৃত মাঠে অবাস্থত হেলমেট বা কোনাে বস্তুতে বল লাগলে ব্যাটিং দলকে 5 রান অতিরিক্ত দেওয়া হয়।
9. যদি কোনাে ব্যাটসম্যান ইচ্ছাকৃতভাবে ফান্ডিং দলের খেলােয়াড়কে বল ধরার সময় বাধাদান
করে, তবে তাকে অবস্ট্রাকটিং দ্য ফিল্ড হিসেবে আউট ঘােষণা করা হয়।
10. ক্রিকেট খেলায় একজন অ্যাম্পায়ার, এফজন লেগ আম্পায়ার, একজন থার্ড আম্পায়ার,
একজন স্কোরার, একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট স্কোরার ও একজন ম্যাচ রেফারি থাকেন।