*১৬৭# ডায়াল করে নগদ একাউন্ট খোলার পদ্ধতি
ইউএসএসডি এর সাহায্যে প্রাথমিক ভাবে খুব সংক্ষেপেই নগদ একাউন্ট খোলা যায়। নগদ এর সেবার জন্য ইউএসএসডি কোডটি হল *১৬৭# ।
নগদ একাউন্ট খুলতেঃ
ধাপ ১ঃ ইউএসএসডি কোড *১৬৭# ডায়াল করুন।
ধাপ ২ঃ আপনার ৪ সংখ্যার পিন (PIN) নাম্বারটি সেট করুন।
ধাপ ৩ঃ পিন নাম্বারটি নিশ্চিত করার জন্য আবারো টাইপ করুন।
ধাপ ৪ঃ একাউন্টে জমাকৃত টাকার ওপর মুনাফা পেতে চান কি না তা ঠিক করুন।
ব্যাস! হয়ে গেল আপনার পার্সোনাল নগদ একাউন্ট। তবে নগদ একাউন্টের সকল সুবিধা পেতে চাইলে অবশ্যই অ্যাপের সাহায্যে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র ভেরিফাই করিয়ে নিতে হবে।
চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নগদ একাউন্ট খোলার পদ্ধতিঃ
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নগদ একাউন্ট খোলার পদ্ধতি
ধাপ ১ঃ ইন্সটল করা
নগদ অ্যাপটি আর ১০টি অ্যাপের মতই গুগল প্লে স্টোরে রয়েছে। অ্যাপটি ইন্সটল করতে গুগল প্লে স্টোর চালু করে সার্চ বারে ‘nagad’ লিখে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন নগদ অ্যাপ। উল্লেখ্য যে অ্যাপল স্টোরেও রয়েছে নগদ অ্যাপ।
নগদ অ্যাপ খুঁজে পাওয়ার পর ‘Install’ বাটনে ট্যাপ করুন। আপনার ইন্টারনেট সংযোগ ঠিক থাকলে মাত্র ২০ মেগাবাইটের অ্যাপটি বেশ দ্রুতই ডাউনলোড ও ইন্সটল হয়ে যাবে।
ধাপ ২ঃ মোবাইল নাম্বারের সাহায্যে রেজিস্ট্রেশন
নগদ অ্যাপটি ইন্সটলের পরে এবার এতে রেজিস্ট্রেশনের পালা। নগদ অ্যাপটি খুললেই নিচের চিত্রের মতো একটি স্ক্রিন ভেসে উঠবে। এবার ‘রেজিস্ট্রেশন করুন’ বাটনে ট্যাপ করুন।
নগদ অথবা বাংলাদেশের যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক হতে চাইলে অবশ্যই একটি মোবাইল নাম্বার প্রয়োজন। তাই একাউন্ট খুলতে আপনার মোবাইল নাম্বারটি প্রবেশ করান। অতঃপর ‘পরবর্তী ধাপ’ বাটনে ট্যাপ করুন। এছাড়া যদি নিজের হাতে একাউন্ট খুলতে না চান তবে আপনার নিকটস্থ নগদ উদ্যোক্তার সাথে মোবাইল নাম্বার, ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে যোগাযোগ করুন। চাইলে অ্যাপের সাহায্যেই সবচেয়ে কাছের উদ্যোক্তা অর্থাৎ এজেন্টকে খুঁজে বের করতে পারবেন।মোবাইল নাম্বার প্রবেশ করানোর পর এবার মোবাইল অপারেটর নির্ধারণের পালা। অর্থাৎ আপনি কোন সিম কোম্পানির সিম ব্যবহার করে একাউন্ট খুলতে চান সেই কোম্পানিটি নির্ধারণ করতে হবে। এখানে যেই নাম্বারটি দিয়েছেন সেই নাম্বারের কোম্পানিটি নির্ধারণ করুন।
ধাপ ৩ঃ জাতীয় পরিচয়পত্র নিবেদন করা
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গুলো যেহেতু টাকার সাথে সম্পর্কিত তাই অবশ্যই ব্যবহারকারীকে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে হয়। এক্ষেত্রে আগে অনেক ঝামেলা থাকলেও বর্তমানে তা নেই বললেই চলে। শুধু জাতীয় পরিচয় পত্রের সাহায্যেই আপনি নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারবেন। নগদ এর ভাষায় এটিকে বলে স্ক্যান। স্ক্যান করার জন্য আমরা অনেকেই কম্পিউটারের দোকানে যাই। কিন্তু এক্ষেত্রে তাঁর প্রয়োজন নেই। কারণ নগদ মোবাইল অ্যাপের সাহায্যে ফোনের ক্যামেরা দিয়েই জাতীয় পরিচয় পত্র স্ক্যান করা যায়। এই ধাপে জাতীয় পরিচয়পত্রের সামনের ও পিছনের দিকের স্পষ্ট ছবি দিতে হবে।উপরের চিত্রের ন্যায় স্ক্রিনের দু’টি ক্যামেরা বাটনে চাপ দিলেই অ্যাপটি ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতি চাবে। এক্ষেত্রে ছবি তোলা ও অডিও রেকর্ড করা দুটির জন্যই অনুমতি দিতে হবে। অনুমতি দিতে ‘Allow’ বাটনে ট্যাপ করুন।
যদি আপনার ফোনে একাধিক ক্যামেরা অ্যাপ থেকে থাকে তবে কোন ক্যামেরা অ্যাপ দিয়ে ছবি তুলতে চান তা নির্ধারণ করতে হবে। যদি না থাকে তাহলে সরাসরি ক্যামেরা চালু হয়ে যাবে। ক্যামেরা চালু হওয়ার পরে স্পষ্ট ভাবে জাতীয় পরিচয় পত্রের দুই পিঠেরই ছবি তুলুন। প্রতিটি ছবি তোলার পরে ছবি সম্পাদনার সুযোগ থাকবে। প্রয়োজনে ছবি ক্রপ করে অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিন। যদি আপনার কাছে পরিচয় পত্র না থাকে তাহলে মোবাইলেই অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে নিন।
ধাপ ৪ঃ স্ক্যান করা তথ্য যাচাই
আপলোড করা ছবি যদি যথেষ্ট স্পষ্ট হয় তবে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই নগদ আপনার পরিচয় যাচাই সম্পন্ন করবে। প্রক্রিয়াটি সফল হয়ে থাকলে নগদ আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র থেকে প্রাপ্ত সকল তথ্য উপস্থাপন করবে। এ সকল তথ্যের মধ্যে থাকবে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার, আপনার নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, মায়ের নাম, জন্ম তারিখ, বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা।এই স্ক্রিনটির সকল তথ্য ভাল ভাবে দেখে নিন। কোন কিছু ভুল থাকলে তা ঠিক করুন। অতঃপর ‘পরবর্তী’ বাটনে ট্যাপ করে ধাপ ‘৫’ এ চলে যান।
ধাপ ৫ঃ অন্যান্য তথ্য পূরণ
এই ধাপটিতে যথাক্রমে আপনার লিঙ্গ, লেনদেনের উদ্দেশ্য ও পেশা নির্ধারণ করুন। একই সাথে নগদ একাউন্টে জমাকৃত টাকার উপর মুনাফা গ্রহণ করতে চান কি না তা ঠিক করে দিন।সকল তথ্য ঠিক ভাবে দিয়েছেন কিনা তা যাচাই করুন। এবার আবারো ‘পরবর্তী’ বাটনে ট্যাপ করুন। চলে যাবেন ধাপ ৬ এ।
ধাপ ৬ঃ ছবি আপলোড
এই ধাপে ব্যবহারকারীর ছবি নগদ অ্যাপের মাধ্যমে আপলোড করতে হবে। ৬ নং ধাপে এলে নগদ অ্যাপ আপনার ক্যামেরা ব্যবহারের অনুমতি চাবে। অনুমতি প্রদানের পর নগদ অ্যাপের মাধ্যমেই একটি ছবি তুলে দিতে হবে।
ছবি তোলার নিয়মাবলীঃ
- ছবি তোলার সময় চোখ থেকে চশমা (যদি থাকে) খুলে ফেলুন।
- ফ্রেমের মধ্যে আপনার সম্পূর্ণ মুখমন্ডল আনুন।
- ছবি তোমার সময় চারপাশে পর্যাপ্ত আলো থাকতে হবে।
- ছবি তোলার সময় আপনার ক্যামেরা এবং চেহারা স্থির রাখুন।
- ছবি তুলতে কয়েকবার চোখের পলক ফেলুন।
চোখের পলক ফেলার পরেই স্বয়ংক্রিয় ভাবে ছবি তোলা হয়ে যাবে। ছবি পছন্দ না হলে আবার তুলতে পারবেন। তবে সাধারণত এ ধরনের অ্যাপ গুলোয় ছবি খুব ভাল আসে না। তাই বারবার চেষ্টা করা নিষ্প্রয়োজন। ছবি নিশ্চিত করার পর নিচের চিত্রের ন্যায় একটি পেজে আপনার ছবিটি আবারো দেখাবে। সব কিছু ঠিক থাকলে ‘পরবর্তী’ বাটনে ট্যাপ করে চলে যান ধাপ ৭ এ।
ধাপ ৭ঃ স্বাক্ষর প্রদান ও শর্তাবলীর সাথে একমত পোষণ
প্রত্যেকটি সেবা গ্রহণের জন্য ঐ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু শর্তাবলী মেনে চলতে হয়। নগদও তার ব্যাতিক্রম নয়। নগদের রয়েছে মোট ১৪টি শর্তাবলী। ধাপ ৮ এ আপনি চাইলেই একে একে সব পড়তে পারবেন। সকল শর্তাবলী ভাল ভাবে পড়ে তবেই ‘আমি নগদ এর শর্তাবলীর সাথে একমত’ বাটনে ট্যাপ করুন। এর নিচের দুটি বাটন হল শর্তাবলী ডাউনলোড ও প্রিন্ট করার অপশন। শর্তাবলীর সাথে একমত পোষণের পর আপনার স্বাক্ষর করতে হবে। এই দিকটি নগদ অ্যাপের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য বলা চলে। এই অ্যাপটিতে স্বাক্ষরের ছবি আপলোডের বদলে সরাসরি অ্যাপের মাধ্যমেই স্বাক্ষর দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাক্ষরের স্থানে ডিজিটালি নিজের স্বাক্ষরটি করুন। পছন্দ না হলে ‘মুছে ফেলুন’ অপশন ব্যবহার করে কয়েকবার চেষ্টা করুন। স্বাক্ষর মন মতো হলে ‘পরবর্তী’ বাটনে ট্যাপ করে ধাপ ৮ এ চলে যান।
ধাপ ৮ঃ আপলোড স্ট্যাটাস
এই ধাপটিতে আপনি নগদ অ্যাপের সাহায্যে যা কিছু আপলোড দিয়েছেন তার প্রতিটির আপলোড স্ট্যাটাস দেখাবে। অর্থাৎ আপলোড সফল হয়েছে কি হয়নি তা বুঝতে পারবেন। পরিচয়পত্রের উভয় দিক, ছবি ও স্বাক্ষরের পাশে সফল লেখা থাকলে বুঝবেন যে আপনার সকল আপলোড সফল হয়েছে।প্রতিটির আপলোড স্ট্যাটাস ‘সফল’ হয়ে থাকলে ‘পরবর্তী’ বাটনে চাপ দিন ও ৯ম ধাপে চলে যান।
ধাপ ৯ঃ সকল তথ্য যাচাই
ধাপ ৯ এ নগদ একাউন্ট খোলার পুরো প্রক্রিয়াতে যেসব তথ্য দিয়েছেন তার সব গুলোই আপনার সামনে উপস্থাপন করা হবে। যথাক্রমে নাম, পিতার/স্বামীর নাম, মাতার নাম, লিঙ্গ, মোবাইল নাম্বার, পেশা, জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার, ঠিকানা ও স্বাক্ষর প্রদর্শিত হবে। এগুলো সব ঠিক আছে কিনা তা খুব ভাল ভাবে যাচাই করুন। ঠিক না থাকলে ‘পূর্ববর্তী’ বাটনে ট্যাপ করে সংশ্লিষ্ট ধাপে ফেরত যেয়ে তথ্য ঠিক করুন।সকল তথ্য ঠিক থাকলে ‘পরবর্তী’ বাটনে ট্যাপ করুন। আপনার নগদ একাউন্ট খেলার সিংহভাগ কাজ শেষ। এবার মোবাইল নাম্বার যাচাই ও পিন সেট করার পালা।
ধাপ ১০ঃ মোবাইল নাম্বার যাচাই
যেহেতু সেবার নাম মোবাইল ব্যাংকিং তাই মোবাইল নাম্বার যাচাই করা খুবই জরুরী। আপনি একাউন্ট খোলার জন্য যেই নাম্বারটি ব্যবহার করছেন তা আপনার কাছেই আছে কি না তা নিশ্চিত করতে একটি ওটিপি পাঠানো হবে। ওটিপিটি ১ মিনিটের মধ্যে উপায় অ্যাপে লিখতে হবে।ওটিপিটি সঠিক ভাবে লিখে ‘যাচাই করুন’ বাটনে ট্যাপ করলেই আপনার মোবাইল নাম্বারটি ভেরিফাই হয়ে যাবে।
ধাপ ১১ঃ পিন সেট করা
মোবাইল নাম্বার একাউন্টের সাথে যুক্ত হওয়ার পরে এবার পিন সেট করার পালা। পিন সেট করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা অবশ্যই জরুরী।
- প্রথম ৪টি সংখ্যা বা প্রথম ৪টি জোড় / বেজোড় সংখ্যা পিন হিসেবে দেওয়া যাবে না।
- নিজের জন্মসাল অথবা নিজের সন্তান কিংবা বাবা-মায়ের জন্মসাল পিন হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু পরিচিত কেউ এমন পিন অনুমান করে খুব সহজেই একাউন্টে ঢুকে পড়তে পারে।
- পিনটি অনুমেয় রাখা চলবে না আবার ভুলে গেলেও চলবে না।
- কোন অবস্থাতেই পিন নাম্বার কাউকে বলা যাবে না। মনে রাখবেন, নগদ কর্তৃপক্ষ কখনোই আপনার কাছে পিন নাম্বার অথবা কোন ধরনের কোড জানতে চাইবে না।
সব কিছু ভেবে পিন সেট করতে হবে। পিন সেট করতে প্রথমে পিনটি নগদ অ্যাপে লিখুন এবং পুনরায় লিখুন। অতঃপর ‘সাবমিট’ বাটনে ট্যাপ করুন।
ধাপ ১২ঃ নগদ অ্যাপকে ফোন অ্যাপের সাথে যুক্ত করুন
আপনি যদি আপনার নগদ ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে সুন্দর ও সাবলীল করতে চান তবে এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহার করতে হলেই মোবাইল নাম্বার ইনপুট করতে হবে। আর এই কাজটি সবচেয়ে সহজ হয় যদি আপনার ফোন / কন্ট্যাক্ট অ্যাপের সাথে নগদ অ্যাপের সংযোগ থাকে। এতে করে আপনার ফোনে সেভ করে রাখা সকল নাম্বার অ্যাপে স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলে আসবে। ফলে আলাদা করে নাম্বার লেখার ঝামেলা থেকে পাবেন মুক্তি।উপরের ছবিটির মতো কোন উইন্ডো আসলে ‘Allow’ বাটনে ট্যাপ করে অনুমতি দিয়ে দিলেই অবশেষে আপনি হয়ে যাবেন নগদ পরিবারের সদস্য। একাউন্ট খোলা সফল হলে আপনার ফোনে স্বাগতম জানিয়ে একটি ম্যাসেজ আসবে ও আপনাকে ভার্চুয়াল কার্ড নাম্বার প্রদান করা হবে।অতঃপর ‘পরবর্তী’ বাটনে ট্যাপ করলেই চলে যাবেন নগদ অ্যাপের হোম মেনুতে। এখান থেকেই ব্যবহার করতে পারবেন নগদ পার্সোনাল একাউন্টের সকল সেবাসমূহ।
নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট
নগদ উদ্যোক্তা একাউন্ট মূলত নগদ উদ্যোক্তা তথা এজেন্টদের জন্য। নগদ তার এজেন্টদের ‘উদ্যোক্তা’ বলে সম্বোধন করে। অর্থাৎ আপনি যদি নগদ এজেন্ট হয়ে আয় করতে চান তবে আপনার যেই একাউন্ট লাগবে তাই উদ্যোক্তা একাউন্ট। এই একাউন্টের সাহায্যেই সাধারণ গ্রাহকদের সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।
উদ্যোক্তা একাউন্টের সুবিধা
আর দশটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মত নগদও মূলত এজেন্ট নির্ভর সেবা। আর তাই নগদ এজেন্ট বা উদ্যোক্তা হওয়ার ব্যবসা মোটামুটি অল্প পুজিতে বেশ ভাল একটি ব্যবসা। নিজের একটি দোকান থাকলে খানিকটা বাড়তি আয়ের জন্য আপনি উদ্যোক্তা হওয়ার আবেদন করতে পারেন। প্রতি লেন-দেন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণের কমিশন পাবেন যা মাস শেষে বেশ ভাল একটি অংকে হয়ে দাঁড়াবে। তাই জীবিকা হিসেবে এখন অনেক বেকার যুবকই নগদ সহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং সেবার উদ্যোক্তা হওয়ার পথকে বেছে নিয়েছেন।
নগদ উদ্যোক্তা নগদ একাউন্ট খোলার নিয়ম
এই একাউন্টটি পার্সোনাল একাউন্ট এর মতো খোলা যায় না। নগদ উদ্যোক্তা হতে সরাসরি তাদের অফিসে আবেদন করতে হয়। আবেদন করতে যেসব জিনিসের প্রয়োজনঃ
- একটি দোকান
- চলতি বছরের ট্রেড লাইসেন্স
- জাতীয় পরিচয় পত্র
উপরিউক্ত জিনিসগুলো ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে নগদ অফিসে যোগাযোগ করলে তারা আপনার তথ্যাবলী যাচাই করে দেখবে। সর্বোপরি আপনি একজন নগদ উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্য কি না তা যাচাই এর পরই আপনার নগদ একাউন্ট কার্যকরী হবে। আপনার আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়েছে কি না তা যাচাই করতে প্রথমেই আপনার ডাউনলোড করতে হবে ‘Nagad Uddokta’ অ্যাপটি। গুগল প্লে স্টোর ও অ্যাপল স্টোর দু’ স্থানেই এটি পাবেন।
এই অ্যাপটি চালু করার সাথে সাথেই আপনাকে বলা হবে ‘একাউন্ট এক্টিভেট করুন’। সেক্ষেত্রে আপনার নগদ উদ্যোক্তা একাউন্টের সাথে সংশ্লিষ্ট নাম্বারটি দিয়ে ‘অ্যারো’ বাটনে ট্যাপ করলেই বুঝতে পারবেন আপনার উদ্যক্তা একাউন্টটি চালু হয়েছে না কি হয় নি। এক্ষেত্রে যেকোনো প্রয়োজনে অফিসে যোগাযোগ করুন।
নগদ মার্চেন্ট একাউন্ট
মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গুলো বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের জন্য এক বিশেষ একাউন্টের সুবিধা রেখেছে যাকে বলে মার্চেন্ট একাউন্ট। নগদ মার্চেন্ট একাউন্টও তেমনি এক ধরনের একাউন্ট। নগদের মার্চেন্ট একাউন্ট প্রোগ্রামের পোষাকি নাম হল ‘স্বাধীন মার্চেন্ট একাউন্ট’ তথা এসএমই। এই সেবাটি মূলত নগদ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য চালু করেছে।
নগদ মার্চেন্ট একাউন্টের সুবিধা
নগদ মার্চেন্ট একাউন্টের সুবিধা মূলত বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই ভোগ করতে পারে। দোকানে মোবাইল ব্যাংকিং এর সাহায্যে পেমেন্টের সুবিধা থাকলে তা অবধারিত ভাবে কিছুটা বেশি ক্রেতা আকর্ষণ করে। এছারাও বড় অংকের টাকা এখন অনেকেই নগদের সাহায্যে পরিশোধ করে থাকে। তার পাশাপাশি অনলাইন শপ গুলোও মার্চেন্ট একাউন্টের পূর্ণ সুবিধা ব্যবহার করতে পারে।
নগদ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার পদ্ধতি
নগদ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমে সাধারণ ভাবেই একটি পার্সোনাল একাউন্ট খোলা শুরু করতে হবে। একাউন্ট খোলার মাঝ পথে অন্যান্য ডকুমেন্ট শিরোনামে একটি পেজ পাবেন। যদি সাধারণ একাউন্ট খুলতে চান তবে এই ধাপ নিষ্প্রয়োজন। কিন্তু মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে হলে এই ধাপে আপনার চলতি বছরের হালনাগাদকৃত ট্রেড লাইসেন্স অথবা অন্যান্য কাগজাবলীর ছবি তুলে আপলোড করতে হবে।মনে রাখবেন, একটি বৈধ ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া কোনভাবেই মার্চেন্ট একাউন্ট খোলা সম্ভব নয়।
নগদ একাউন্ট ব্যবহারের শর্তাবলী
নগদ একাউন্ট ব্যবহারের জন্য প্রত্যেক গ্রাহককেই বেশ কিছু শর্তাবলী মেনে চলতে হয়। একাউন্ট চালানো শুরু করার আগে এসব শর্তাবলী সম্পর্কে জেনে নেওয়াই ভাল। এতে ভবিষ্যতের অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়ানো যায়।
নিচে সংক্ষেপে নগদের শর্তাবলী উল্লেখ করা হলোঃ
১) নগদ বাংলাদেশের ডাক বিভাগের একটি ডিজিটাল অর্থনৈতিক সেবা এবং প্রত্যেক ব্যবহারকারী নগদ গ্রাহক নামে পরিচিত হবেন। একটি একাউন্ট শুধুমাত্র একজন গ্রাহকই ব্যবহার করতে পারবেন।
২) বাংলাদেশের প্রচলিত সকল আইন ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত বিধি, বিধান, নীতিমালা, সার্কুলার, আদেশ/নির্দেশ অনুযায়ী নগদ একাউন্টের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
৩) প্রয়োজন পড়লে নগদ একাউন্ট নাম্বারটি সঠিক ভাবে উল্লেখ করতে হবে। ভুল নাম্বার উল্লেখ করলে কোন প্রকার ক্ষয়-ক্ষতির জন্য নগদ দায়ী থাকবে না।
৪) একাউন্টের টাকার স্বল্পতার কারণে লেনদেন সম্পন্ন না হলে তার দায় গ্রাহকের।
৫) ক্যাশ আউট / পেমেন্ট ইত্যাদি ক্ষেত্রে কাউন্টার ত্যাগের পূর্বেই সব কিছু যাচাই করতে হবে। কাউন্টার ত্যাগের পর কোন রকম অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না।
৬) কোন রকম প্রলোভন বা প্রতারণার শিকার হয়ে গ্রাহক তার টাকা হারালে তার সম্পূর্ণ দায়ভার ব্যাক্তিগতভাবে ও এককভাবে গ্রাহকের। নগদ সেই টাকা উদ্ধারের ক্ষেত্রে কোনভাবেই দায়বদ্ধ থাকবে না।
৭) নগদ সেবার সংশ্লিষ্ট মূল্য ও মাশুল বাংলাদেশ ডাক বিভাগ কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত ও পরিবর্তিত হতে পারে।
৮) মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত সার্কুলার ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ অনুযায়ী গ্রাহক নগদের চাহিদা অনুযায়ী যেকোনো তথ্য নগদকে প্রদানে বাধ্য থাকবে।
৯) নগদ গ্রাহকের সকল তথ্য সর্বোচ্চ গোপনীয়তার সাথে সংরক্ষণ করবে। তবে নগদের উপর এখতিয়ারপ্রাপ্ত সরকারি কর্তৃপক্ষ, নগদের অনুমোদিত ব্যাক্তি অথবা অনুমোদিত সেবা প্রদানকারী অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং আদালতের নির্দেশপ্রাপ্ত যেকোনো ব্যাক্তির কাছে নগদ এসব তথ্য প্রকাশ করতে পারবে।
১০) নগদ গ্রাহকদের তাদের পিন (PIN) নাম্বার সর্বোচ্চ গোপনীয়তার সাথে সংরক্ষণ করতে হবে। কোনরকম ভুল, অসতর্কতা কিংবা প্রতারণার কারণে কেউ পিন নাম্বার জেনে গেলে এবং সে সংক্রান্ত কোন ক্ষতি হলে তার কোন দায়-দায়িত্ব নগদ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে না।
১১) পার্সোনাল একাউন্টের ক্ষেত্রে গ্রাহকগণ তাদের নগদ একাউন্ট ব্যবহার করে যেকোনো ধরনের ব্যবসা করা থেকে বিরত থাকবেন। গ্রাহক যদি এই শর্তাবলী ভঙ্গ করেন কিংবা নগদের বিবেচনায় যদি তার আচরণ সন্দেহজনক কিংবা গ্রাহকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে তাহলে কোনরকম নোটিশ প্রদান ছাড়াই তার একাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার অধিকার নগদের রয়েছে।
১২) নগদ একাউন্টের পাঠানো সমস্ত নির্দেশাবলী সকল গ্রাহক মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন।
১৩) নগদ একাউন্টের সাথে সংযুক্ত সিম কার্ড প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত যাবতীয় দায়-দায়িত্ব গ্রাহকের থাকবে। নগদ এ সংক্রান্ত কোন দায় গ্রহণ করবে না।
১৪) নগদ অ্যাকাউন্ট সংশ্লিষ্ট সিম কার্ড প্রতিস্থাপন হলে সংশ্লিষ্ট মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরের কাছ থেকে প্রতিস্থাপনের তথ্য পাওয়ার পর নগদ উক্ত অ্যাকাউন্টটির কার্যক্রম বন্ধ করে দিবে। অন্তত ২৪ ঘন্টা নগদ অ্যাকাউন্টটি স্থগিত থাকবে।
শেষকথা
সময়ের সাথে সাথে বাংলাদেশে অনেক মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আবির্ভাব হচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার বাজারে তাদের টিকে থাকতে হলে চাই নিখুঁত সেবা ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্য। সেই কাজটি বেশ ভাল ভাবেই সম্পন্ন করছে নগদ। একজন গ্রাহক হিসেবে সকলেরই উচিত শুধু একটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবার উপর নির্ভর না করে একাধিক সেবা ব্যবহার করে। এতে করে বিভিন্ন সেবার বিভিন্ন অফার গুলো ভোগ করতে পারবেন সহজেই। আবার কোন একটি প্রতিষ্ঠানের সেবা বিঘ্নিত হলে নির্ভর করতে পারবেন অন্য প্রতিষ্ঠান সমূহের উপর। আশা করি বাংলাদেশের বাজারে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে ভবিষ্যতেও নগদ সফল হবে।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১) নগদ একাউন্টে টাকা জমা রাখতে কি কোন চার্জ দিতে হয়?
উত্তরঃ না, ক্যাশ আউটের সময় চার্জ দিতে হয়।
২) ভুল পিন প্রবেশ করালে কী হবে?
উত্তরঃ একাধারে ৩বার ভুল পিন প্রবেশ করালে আপনার পিন নাম্বারটি সাময়িক ভাবে ব্লক করা হবে। নগদের কাস্টমার সার্ভিসে যোগাযোগ করে পিন মুক্ত করতে হবে।
৩) নগদের সাথে যোগাযোগ করবো কিভাবে?
উত্তরঃ যেকোনো প্রয়োজনে কল করুন, ১৬১৬৭ নাম্বারে।
৪) ভার্চুয়াল কার্ড নাম্বার কী?
উত্তরঃ ভার্চুয়াল কার্ড নাম্বার হল নগদ সিস্টেম কর্তৃক স্বয়ংক্রিয়ভাবে সৃষ্ট একটি নাম্বার যা নগদ একাউন্টের খোলার সময় তৈরি হয়।
৫) নগদে কি বিদেশী মুদ্রা জমা রাখার সুযোগ আছে?
উত্তরঃ না নেই। বর্তমানে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং এ শুধু টাকা জমা রাখতে পারবেন।
৬) দোকান না থাকলে কি নগদ উদ্যোক্তা হওয়া যাবে?
উত্তরঃ না, উদ্যোক্তা হতে হলে অবশ্যই একটি দোকান প্রয়োজন।
ছবি ও তথ্যসূত্রঃ নগদ অ্যাপ ও নগদ এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটঃ Nagad