পালিত মুরগির অসংখ্য রোগ রয়েছে। প্রতিটি রোগের আবার অনেক ধরনের জাত রয়েছে। একই রোগের বিভিন্ন জাতের লক্ষণ ও মৃত্যুহারের মাঝে রয়েছে বেশ পার্থক্য। এছাড়াও বিভিন্ন রোগের বিভিন্ন লক্ষণ তো রয়েছেই। বাংলাদেশে মূলত রাণীক্ষেত, গামবোরা, ককসিওডেসিস, কলেরা, বসন্ত, সালমোনেলোসিস ইত্যাদি রোগ বেশি হয়ে থাকে। এর মাঝে ভাইরাসজনিত রোগগুলোর তেমন কোন চিকিৎসা নেই। এদের জন্য সময় মতো টিকা দেওয়াই সর্বাপেক্ষা উত্তম উপায়। নিম্নে এ রোগ গুলোর নাম ও এসব রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও প্রতিরোধের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
রাণীক্ষেত
এদেশে মুরগির সবচেয়ে পরিচিত ও ভয়াবহ রোগ গুলোর মধ্যে একটি হলো রাণীক্ষেত। মূলত আমাদের দেশিও জাতের মুরগি পালন করতে গিয়ে এ রোগটির বেশী সম্মুখীন হতে হয়। এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। ইংরেজিতে এই রোগটি ‘নিউ ক্যাসল’ রোগ নামে পরিচিত। এটি মূলত শ্বাসতন্ত্রের একটি রোগ যা শুধু মুরগি নয় বরং অন্যান্য পাখি যেমন হাঁস, টার্কি, কোয়েল, কবুতর ইত্যাদির ও হতে পারে। এই রোগটি প্রচুর ছোঁয়াচে ও একটি আক্রান্ত মুরগি হতে মাত্র ২-৬ দিনে সমস্ত পালে রোগটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।
লক্ষণসমূহ
- এ রোগের সবচেয়ে বড় লক্ষণ হলো সবুজ রঙের পাতলা মল। অনেক সময় মলের সাথে রক্ত যায়।
- মুরগি ঝিমায়, এরা ক্রমশ দুর্বল হতে থাকে ও চলা ফেরা কমে যায়।
- হঠাৎ করে বসে পড়ে অথবা পাখা নেতিয়ে পড়ে।
- শ্বাসকষ্ট হয়, গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ হয়। মুখ হা করে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করে।
- পাতলা খোসার ডিম পাড়ে। ডিম পাড়া কমিয়ে দেয় অথবা বন্ধ করে দেয়।
চিকিৎসা
রাণীক্ষেত একটি ভাইরাস জনিত রোগ হওয়ায় এর তেমন কোন চিকিৎসা নেই। সময় মতো টিকা প্রদানই এই রোগ হতে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায়। বাচ্চা মুরগিকে বিসিআরডিভি ও বড় মুরগিকে আরডিভি টিকা দিতে হবে। তবে আক্রান্ত হওয়ার পর গৌণ সংক্রমণ রোধে এন্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার দিলে মৃত্যুহার কমার কিছুটা সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিরোধ ও সতর্কতা
রাণীক্ষেত রোগ প্রতিরোধে মুরগিকে বাইরের পরিবেশ হতে যথাসম্ভব আলাদা রাখতে হবে। মূলত বাতাসের সাহায্যে এ রোগ ছড়ায় তাই খামারের আশে পাশে পর্দা রাখতে হবে। আক্রান্ত মৃত মুরগিকে পুতে ফেলতে হবে ও খামারকে ব্লিচিং পাউডার বা জীবণুনাশক দিয়ে খুব ভাল ভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
গামবোরা
গামবোরা আরেকটি ভাইরাসজনিত রোগ। ‘বিরনা’ নামক ভাইরাসের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ খুবই সংক্রামক হলেও এর মৃত্যুহার কম। এ রোগে সাধারণত ৩০% আক্রান্ত মুরগি মারা যায়। এ রোগে মুরগির প্রতিরোধ ক্ষমতা ও খাদ্য রূপান্তরের ক্ষমতা কমে যায়।
লক্ষণসমূহ
- সাদা চুনের মতো পাতলা পায়খানা করে।
- পালক উষ্কো-খুষ্কো থাকে।
- দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে থাকে এবং নড়া চড়ায় অনিহা প্রকাশ করে।
- তাপমাত্রা হটাৎ বেড়ে যায়। মুরগির শরীর পানিশূণ্য হয়ে পড়ে।
- ভেজা মলদ্বার দেখা যায়।
এছাড়াও মুরগি কাটলে মুরগির পা ও রানের মাংসে ছোপ ছোপ রক্ত পাওয়া যায়। কিডনি বেশ বড় হয়। কলিজা বড় ও ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে।
চিকিৎসা
অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগের মতো এটিরও তেমন কোন চিকিৎসা নেই। তবে এই রোগে আক্রান্ত হলে মুরগির শরীর পানিশূণ্য হয়ে পড়ে। শরীরে দেখা দেয় লবণ শুণ্যতা। তাই ঘাটতি পূরণে নিয়মিত স্যালাইন পানি খাওয়াতে হবে। সাথে ব্যাকটেরিয়া জনিত দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণ রোধের জন্য এন্টিবায়োটিক খাওয়ানো যেতে পারে। সংক্রমণ প্রতিরোধে সময় মতো টিকা দেওয়াই একমাত্র উপায়।
ককসিডিওসিস
ককসিডিওসিস মূলত রক্ত আমাশয়। এই রোগটি মূলত আইমেরিয়া নামক এক ধরনের প্রটোজোয়ার কারণে হয়ে থাকে। এই রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় দুই হতে চার সপ্তাহের বাচ্চা। তবে বড় মুরগির ও এ রোগ হতে পারে। এ রোগ মূলত মুরগির বিষ্ঠার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। মাত্র এক গ্রাম বিষ্ঠায় ৭০ হাজার জীবাণু থাকতে পারে।
লক্ষণসমূহ
- অনেকটা গুড়ের মতো রক্তমিশ্রিত পাতলা মলত্যাগ করে। মলত্যাগের পরেও মলদ্বারে মল লেগে থাকে।
- বাচ্চা আক্রান্ত হলে খাওয়া কমিয়ে দেয় ও মাথা ডানার মাঝে ঢুকিয়ে রাখে।
- পালক উষ্কো-খুষ্কো হয়ে থাকে ও ডানা ঝুলে পড়ে।
- খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায় না।
- আক্রান্ত মুরগি ঝিমাতে থাকে। অনেক সময় পাল হতে আলাদা হয়ে অন্ধকার যায়গায় গিয়ে ঝিমায়।
- রোগ তীব্র পর্যায়ে গেলে খামারের লিটারে তাজা রক্ত পড়ে থাকে।
চিকিৎসা
এ রোগটির চিকিৎসা রয়েছে। ইএসবি৩ ৩০%, ককসিকিউর পাউডার, অ্যামপ্রোলিয়াম পাউডার – এ দু’টি ঔষুধের যেকোন একটি নির্বাচন করে এক লিটার পানিতে আড়াই গ্রাম মেশাতে হবে। অতঃপর তিন থেকে পাঁচ দিন তা খাওয়াতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে যেকোনো ঔষুধ প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করতে হয়।
সতর্কতা ও প্রতিরোধ
প্রতিকার হতে প্রতিরোধ উত্তম। তাই এ রোগটি প্রতিরোধ করতে বাচ্চার বয়স ১৪ দিন হলেই এক গ্রাম পাউডার মেশানো পানির মিশ্রণ তিন দিন খাওয়াতে পারেন। প্রয়োজনে ২৪ দিন বয়স হলে দ্বিতীয় পর্যায়ে আবারো একই মাত্রার ঔষুধ খাওয়াতে পারেন।
কলেরা
কলেরা একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ। এটি হাঁস-মুরগি উভয়েরই হয়ে থাকে। সাধারণ দুই মাস এর বেশি বয়সী হাঁস-মুরগি বেশি ঝুঁকিতে থাকে। পানি বা খাবার হতেই এ রোগের সংক্রমণ ঘটে।
লক্ষণসমূহ
- এ ক্ষেত্রেও মুরগি পাতলা সবুজ পায়খানা করে।
- আক্রান্ত মুরগির হাঁটু ও মাথা ফুলে যায়।
- শ্বাসকষ্ট হওয়ায় মুখ হা করে নিশ্বাস নেয়। পিপাসা বেড়ে যায়।
- মুরগি দুর্বল হয়ে পড়ে ও ডিম পাড়ে না।
- মুরগির মাথার ঝুঁটি ও কানের লতি নীলচে অথবা কালো হয়ে যায়।
চিকিৎসা
এ রোগের চিকিৎসা ট্যাবলেট খাওয়ানোর মাধ্যমে করা সম্ভব। রেনামাইসিন, অক্সিভেট, ব্যাকটিট্যাব ইত্যাদি ট্যাবলেটের যেকোনো একটি নির্বাচন করে প্রতি চারটি মুরগির জন্য একটি ট্যাবলেট পানি অথবা খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়াতে হবে। এই ভাবে তিন দিন ঔষুধ প্রয়োগ করতে হবে। একই সাথে খাবার স্যালাইন দিতে হবে।
সতর্কতা ও প্রতিকার
মুরগির খাবার ও পানির দিকে সব সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে তা খোলা বা নোংরা না থাকে। এছাড়াও মাসে একবার অক্সিটেট্রাসাইক্লিন জাতীয় ঔষুধ খাওয়াতে হবে। ১৫ টি মুরগির জন্য এক গ্রাম ঔষুধ পানিতে মিশিয়ে পর পর তিন দিন খাওয়াতে হবে। তবে ঔষুধ অথবা প্রতিষেধক প্রয়োগের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।
এভিয়ান পক্স বা বসন্ত
মুরগির রোগ সমূহের মাঝে বসন্ত অন্যতম প্রাচীন একটি রোগ। এটি হয়ে থাকে পক্স জাতীয় ভাইরাসের কারণে। মুক্ত পরিবেশের পাখিদের এটি খুব বেশি ক্ষতি না করলেও আবদ্ধ পরিবেশে (যেমনঃ খামার) অনেক মুরগির মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বিশেষত মুরগির বাচ্চা এই রোগে আক্রান্ত হলে মৃত্যু প্রায় অনিবার্য।
লক্ষণসমূহ
- সাধারণত মোরগ মুরগির শরীরের পালকবিহীন স্থানে যেমন ঝুঁটি বা কানের লতিতে গুটি তৈরি হয় যা পরবর্তীতে ক্ষতের সৃষ্টি করে।
- মারাত্নক অবস্থা ধারণ করলে মুখের ভেতরের গুটি দেখা দেয়। অথবা খাদ্যনালী, শ্বাসনালীতে সাদা বা হলুদ রঙের ঘা দেখা দেয়।
- ঠোট ও চোখের পাতাতে গুটি হয়। চোখ আংশিক বন্ধ হয়ে যায়।
- পরিপাকতন্ত্রে রোগ সংক্রমিত হলে মুরগি খাদ্য অনেক কম খায়, দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে না ও ওজন কমতে থাকে।
চিকিৎসা
পূর্বেই বলেছি ভাইরাস জাতীয় রোগের তেমন চিকিৎসা নেই। তবে পটাশ বা ফিটকিরর পানিতে তুলা ভিজিয়ে আক্রান্ত স্থান দিনে তিন-চারবার মুছিয়ে দিলে কিছুটা উপকার হবে। রোগ সেরে গেলে পুনরায় যাতে সংক্রমণ না হয় তাই রেনামাইসিন জাতীয় ঔষুধ প্রতিদিন এক গাম ছয়টি বড় মুরগি অথবা ১২টি বাচ্চা মুরগিকে তিনদিন খাওয়াতে হবে।
সতর্কতা ও প্রতিরোধ
জীবাণুনাশক পানি দিয়ে খামারের আশে পাশে ধুতে হবে। বাচ্চাকে ৩-৪ দিন বয়স হলেই পিজিয়ন পক্স টিকা দিতে হবে ও বয়স ৩০ দিন হলেই ফাউল পক্স টিকা দিতে হবে।
সালমোনেলোসিস বা পুলোরাম
এই রোগটি মূলত পুলোরাম নামেই পরিচিত। তবে এর আরেকটি নাম হলো টাইফয়েড। ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণেই পুলোরাম বা সালমোনেলোসিস রোগের সংক্রমণ ঘটে। মূলত বাচ্চা অবস্থাতেই মুরগি এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। মা হতে ডিমের মাধ্যমে বাচ্চার মাঝে রোগের সংক্রমণ ঘটে। ডিম ফুটানোর ইনকিউবেটর হতে এই রোগ ছড়াতে পারে। এছাড়াও মুরগির মল-মূত্রের মাধ্যমেও এর সংক্রমণ ঘটে।
লক্ষণসমূহ
- অনেক বাচ্চা এ রোগের কারণে ডিমের মাঝেই মারা যায়। কিছু বাচ্চা ডিম ফোটার পর কিছুক্ষণ বাঁচলেও কোন লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই মারা যায়।
- জন্মের পর হতেই বাচ্চা গুলো ঝিম ধরে মাথা নিচু করে বসে থাকে।
- তাপের উৎসের কাছে জড়ো হয়ে শরীর গরম রাখার চেষ্টা করে।
- সাদা ও পাতলা মলত্যাগ করে।
- মলদ্বার ভিজে থাকে ও বাচ্চার নাভি শুকায় না।
চিকিৎসা
এ রোগের চিকিৎসায় কলিপ্রিম পাউডার অথবা ট্রাইমেথোপ্রিন জাতীয় ঔষুধের ব্যবহার হয়ে থাকে। এক গ্রাম কলিপ্রিম পাউডার এক লিটার পানিতে মিশিয়ে তা ছয়টি বড় মুরগি বা বারো হতে পনেরোটি বাচ্চাকে তিন থেকে পাঁচ দিন খাওয়ানো যাবে। খাবারে মিশিয়েও খাওয়ানো যেতে পারে।
সতর্কতা ও প্রতিরোধ
যেহেতু ইনকিউবেটর হতে এ রোগের সংক্রমণ হতে পারে তাই ইনকিউবেটর খুবই ভাল ভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এছাড়াও এই রোগে একবার আক্রান্ত মুরগি এই রোগের বাহক হয়ে যায় ও পরবর্তীতে নিজের ডিমে সেই রোগের জীবাণু ছড়িয়ে দেয়। এই ধারা অব্যাহত থাকে ও প্রতিবার ৫০-৬০ ভাগ বাচ্চা মারা যায়। তাই একবার আক্রান্ত মুরগি বেঁচে গেলেও তাকে পাল হতে সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলতে হবে এবং ডিম ফুটানোর সুযোগ দেওয়া যাবে না।
ভিটামিন ও খনিজ লবণের অভাবে নানা রোগ
নানা রকম ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার পাশাপাশি শুধুমাত্র ভিটামিন ও খনিজ লবণের অভাবেও মুরগি নানা রোগে ভুগতে পারে। ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ ও খনিজ লবণ তাই মুরগির খাবারের অপরিহার্য অংশ। এগুলো মুরগিকে রাখে সবল ও সতেজ। হাঁস-মুরগির জন্য বিশেষ ভাবে প্রয়োজনীয় খাদ্যপ্রাণ গুলো হলো ভিটামিন এ, ডি, ই ও ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স। নিচে ভিটামিনের অভাবে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করা হলো।
প্যারালাইসিস
প্যারালাইসিস অর্থ অবশ হয়ে যাওয়া। ভিটামিন বি১ ও বি২ এর অভাবে মুরগির এ রোগ হয়। ফলে মুরগি ঘাড় ও পা নাড়াতে পারে না। গলা বাকা হয়ে যায়। চিকিৎসা হিসেবে থায়াবিন বা ডব্লিউএস ভিটামিন পাউডার খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে দিতে হবে। ছয়টি বড় মুরগি বা বারো হতে পনেরোটি বাচ্চাকে মাত্র এক গ্রাম ঔষুধ তিন দিন ধরে খাওয়াতে হবে।
বাচ্চার পাখা না গজানো
বাচ্চার পাখা ঠিক ভাবে না গজানোর প্রধান কারণ হলো ফলিক এসিড ও জিংকের অভাব। তবে এর পাশাপাশি জিংকের অভাব ঘটলে বাচ্চার পাতলা পায়খানাও হতে পারে। অনেক সময় ফলিক এসিডের অভাবে রক্তশূন্যতাও দেখা দেয়। এমতাবস্থা রোধে ১৫ দিন পর ডব্লিউএস ভিটামিন তিন দিন ব্যাপী খাওয়াতে হবে।
ডিমের পাতলা খোসা
মূলত ডিমের খোসা ও হাড়ের পুরুত্ব ক্যালসিয়ামের ওপর নির্ভরশীল। মা মুরগীর শরীরে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না থাকলে ডিমের খোসা অত্যাধিক পাতলা হয় অথবা খোসাই সৃষ্টি হয় না। এছাড়াও বাচ্চা মুরগির হাড় অনেক দুর্বল হয় ও ক্ষেত্রবিশেষে বেঁকে যায়। মা মুরগির শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রা বাড়াতে নিয়মিত তাকে ঝিনুক বা শামুক চূর্ণ বা ডিমের খোসার গুঁড়া খাওয়াতে হবে। এছাড়াও খাদ্যপ্রাণের অভাবে মুরগির নানা রকম জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমন ভিটামিন-এ এর অভাবে চোখের সমস্যা হয়, ভিটামিন-ই এর অভাবে ডিম পাড়া বন্ধ করে দেয়, ভিটামিন-সি এর অভাবে খাদ্য পরিপাকে সমস্যা হয়। একই ভাবে ক্ষুদামন্দ, দুর্বলতা, ওজন কমে যাওয়া, চামড়ার সমস্যা ইত্যাদি দেখা দেয় ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
ভিটামিনের অভাবজনিত এই সকল সমস্যার সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো মুরগিকে নিয়মিত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার প্রদান করা। যেমনঃ সবুজ শাক-সবজি, হলুদ ভুট্টা, শস্যকণা, ঝিনুক বা শামুক চূর্ণ ইত্যাদি। এছাড়াও খামারে কৃত্রিম ভিটামিন যেমন মাল্টিভিটামিন বা ডব্লিউএস ভিটামিন খাওয়ানো যেতে পারে। তবে তার চেয়ে ভিটামিন যুক্ত খাবারের সাহায্যে চাহিদা মেটানোটাই উত্তম।
সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি
মুরগিকে রোগ মুক্ত রাখতে মুরগির খোপ বা খামারের পরিষ্কার পরিচ্ছনতার দিকে অবশ্যই অত্যন্ত মনোযোগী হতে হবে। সেজন্য কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
- খামারের আশে পাশে কোন ময়লা ফেলা যাবে না, নিয়মিত জীবাণুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।
- মুরগির এক চালান চলে গেলে পরের চালান ওঠানোর আগে খুব ভাল ভাবে খামার পরিষ্কার করতে হবে। নিয়মিত লিটার পরিষ্কার করতে হবে।
- মুরগির সংস্পর্শে আসার পূর্বে নিজেকে ভাল ভাবে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
- খামারের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা জুতা ব্যবহার করতে হবে, সম্ভব হলে আলাদা পোষাক বা আবরণ ব্যবহার করতে হবে।
- পানি ও খাবারের পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
- খামারের আশে পাশে পর্দা রাখতে হবে।
- ঔষুধ ও টিকা সঠিক ভাবে সংরক্ষন করতে হবে এবং নিয়ম অনুযায়ী দিতে হবে। সর্বোপরি এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এ সকল নির্দেশনা মেনে চলার মাধ্যমেই আপনার খামার/খোপ থাকবে নিরাপদ। সুন্দর হয়ে উঠবে সাফ্যলের পথ চলা। আর আপনার এই পথচলাকে আরও সুন্দর করে তুলতে এক নজরে দেখে নিতে পারেন আমাদের আরেকটি লেখা যেখানে দেশি মুরগি পালন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ
১) ‘উন্নত পদ্ধতিতে দেশি মুরগি পালন’।
লেখকঃ মো. আজিজুল হক চৌধুরী।
ভেটেরিনারি অফিসার, ফসল প্রকল্প, প্র্যাকটিকাল একশন বাংলাদেশ।
২) Poultry Giants
Link: https://poultrygaints.com/category/chicken_disease/
৩) ই-প্রাণিসম্পদ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।