আয়কর রিটার্ন কি?
অনেকেই আয়কর পরিশোধ করা এবং রিটার্ন দাখিল করাকে একই বলে মনে করে থাকেন। কিন্তু কার্যত এই দুটি বিষয় এক নয়। রিটার্ন দাখিল করা হচ্ছে সরকারকে নিজের সকল সম্পত্তি এবং আয় সম্পর্কে জানানো। নির্দিষ্ট আয়কারী সকলকেই তাদের বাৎসরিক আয় অনুযায়ী আয়কর দিতে হয়। এবং আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুযায়ী প্রতি বছরই একজন করদাতার বাৎসরিক আয়ের সকল তথ্যাবলী বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের একটি নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে দেখাতে হয়। আয়কর কর্তৃপক্ষ সাধারণত সেটি অনুযায়ী আয়করের পরিমাণ নিশ্চিত করে থাকে। এই ফরমের মাধ্যমে আয়, ব্যয় ও সম্পত্তির তালিকা কর্তৃপক্ষকে দেখানো হয়। করদাতার এই আয়, ব্যয় ও সম্পত্তির সম্পর্কে কর অধিদপ্তরকে জানানোর বিষয়টিই হলো আয়কর রিটার্ন দাখিল করা।
কাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে?
আমাদের দেশে সাধারণত টিন সার্টিফিকেট ধারী সকলেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। কিন্তু আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে করযোগ্য আয়ের ভিত্তিতে রিটার্ন জমা দেওয়া দেশের সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। এটি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু শ্রেনীর মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। তাই আয়কর রিটার্ন দেওয়ার আগে কাদের জন্য করযোগ্য আয়ের ভিত্তিতে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া প্রযোজ্য তা জেনে নেওয়া উচিত।
কর ও রিটার্ন হিসাবের খাত
বাংলাদেশে সাধারণত কর যোগ্য আয় আছে এধরণের সবাইকে প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে বাধ্যতামূলক ভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। করযোগ্য আয় সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু খাতের আয় থেকে হিসাব করা হয়। খাতগুলো হলোঃ
- কোন চাকরি থেকে প্রাপ্ত বেতনাদি
- নিরাপত্তা জামানতের উপর সুদ
- কৃষি ক্ষেত্রে বা কৃষি কাজের আয়
- বিভিন্ন ব্যবসা থেকে আয়
- অন্য কোন পেশার আয়
- নির্দিষ্ট মূলধন থেকে প্রাপ্ত মুনাফা
- গৃহ সম্পত্তি থেকে প্রাপ্ত আয়
- মূলধনী মুনাফা
- অন্য কোন উৎস থেকে পাওয়া আয়
এসকল উৎস থেকে করা আয় বৎসরে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ অতিক্রম করে গেলেই ঐ ব্যক্তিকে আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক ভাবে জমা দিতে হবে।
আয়কর ও রিটার্ন দাখিলের জন্য নূন্যতম আয়
আয়কর দেওয়া একটি নির্দিষ্ট আয়সীমার পর থেকেই বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। এটিকে অধিকাংশ জায়গাতেই আয়কর নিম্নসীমা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আয়কর নিম্নসীমা অবশ্য এদেশে নারী-পুরুষ ও অন্যান্য কিছু বিশেষ ক্ষেত্র ভেদে কিছুটা আলাদা। এখানে তা উল্লেখ করা হলোঃ
স্বাভাবিক ও ৬৫ বছর বয়সের কম পুরুষ ব্যক্তির ক্ষেত্রেঃ
বাৎসরিক আয় ৩,০০,০০০ (তিন লক্ষ) টাকার বেশী হলে আয়কর রিটার্ন প্রযোজ্য
স্বাভাবিক মহিলা ও ৬৫ বছরের বেশী পুরুষ ব্যক্তির ক্ষেত্রেঃ
বাৎসরিক আয় ৩,৫০,০০০ (তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার বেশী হলে আয়কর রিটার্ন প্রযোজ্য।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্ষেত্রেঃ
বাৎসরিক আয় ৪,৫০,০০০ (চার লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকার বেশী হলে আয়কর রিটার্ন প্রযোজ্য
গ্যাজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার ক্ষেত্রেঃ
বাৎসরিক আয় ৪,৭৫,০০০ (চার লক্ষ পঁচাত্তর হাজার) টাকার বেশী হলে আয়কর রিটার্ন প্রযোজ্য
এছাড়াও প্রতিবন্ধী সন্তান বা পোষ্য রয়েছে এরকম কোন পরিবারের ক্ষেত্রে আয়কর নিম্নসীমা বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক সন্তানের জন্য পিতামাতা অথবা আইনানুগ অভিভাবকদের মাঝে যেকোনো একজনের আয়কর সীমা ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা বেড়ে যাবে। তাই ঐ ব্যক্তিকে আয়কর রিটার্ন দাখিল অথবা আয়কর দেওয়ার জন্য স্বাভাবিকভাবে প্রযোজ্য সীমার চাইতে ৫০,০০০ টাকা বাড়িয়ে হিসাব করতে হবে।
আবশ্যিক ভাবে রিটার্ন দাখিল করতে হবে যাদের
উপরের তালিকাগুলো ছাড়াও আরো কতগুলো ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা আবশ্যিক। এগুলো হলোঃ
- কেউ ১২ ডিজিটের টিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করলে
- পূর্ববর্তী তিন বছরের যেকোন বছরে যদি করদাতার আয় করযোগ্য হয়ে থাকে অথবা করদাতার কর নির্ধারণ হয়ে থাকে
- করদাতা কোন কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার হলে
- করদাতা কোন ফার্মের অংশীদার হলে
- কোন সরকারি কর্মচারী বা কর্মকর্তার বেতন বছরের যে কোন সময় ১৬,০০০ (ষোল হাজার) টাকা বা তার বেশী হলে
- করদাতা কোন নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদের কর্মী হলে
- করদাতার আয় যদি অব্যাহতি প্রাপ্ত অবস্থায় বা কমে গিয়েছে এরকম অবস্থায় করযোগ্য হয়ে থাকে
- করদাতা যেকোন ধরনের মোটর গাড়ির মালিক হলে
- করদাতা ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেছেন এরকম ব্যবসায়ী হলে
- করদাতা মূল্য সংযোজন কর আইনের অধীনে নিবন্ধিত কোন ক্লাবের সদস্য হলে
- করদাতা চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, একাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার অথবা সমজাতীয় কোন পেশায় পেশাজীবী হিসেবে কোন স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থায় নিবন্ধিত থাকলে
- করদাতা আয়কর পেশাজীবী হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে নিবন্ধিত থাকলে
- করদাতা কোন শিল্প বিষয়ক চেম্বার বা কোন ব্যবসায়িক সংস্থার সদস্য হলে
- করদাতা কোন সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার নির্বাচনে বা সংসদ সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হলে
- করদাতা কোন সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা স্থানীয় সরকারের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে
- করদাতা কোন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে থাকলে
- করদাতা লাইসেন্স করা অস্ত্রের মালিক হলে
- করদাতা মোটরযান, স্থান, বাসস্থান বা অন্যান্য সম্পদ সরবরাহের মাধ্যমে শেয়ারড ইকোনমিক এক্টিভিজ-এ অংশগ্রহণকারী হলে
এছাড়া এদেশে তিন শ্রেনীর মানুষের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে না। তার তালিকা হলোঃ
- বাংলাদেশে ফিক্সড বেস নেই এমন অনিবাসিকে।
- জমি বিক্রয়ের জন্য ১২ ডিজিটের টিন গ্রহণ করেছেন, কিন্তু করযোগ্য আয় নেই এরূপ ব্যক্তিকে।
- ক্রেডিট কার্ড গ্রহণের জন্য ১২ ডিজিটের টিন গ্রহণ করেছেন, কিন্তু করযোগ্য আয় নেই এরূপ ব্যক্তিকে।
সাধারণত এসকল খাতের আওতাধীন সকলকেই প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
আয় অনুযায়ী করের হার
বাংলাদেশে সাধারণত প্রতি বছরই বাৎসরিক আয় অনুযায়ী আয়কর প্রদান করতে হয়। কোন ব্যক্তির বাৎসরিক আয় আয়কর নিম্নসীমা অতিক্রম করলেই তাকে প্রতি বছর অবশ্যই কর দিতে হবে। তবে যদি কোন ব্যাক্তি আয়কর নিম্নসীমা অতিক্রম না করে তাহলে তাকে জিরো ট্যাক্স রিটার্ন বা শূন্য আয়কর রিটার্ন দিতে হবে। তাই আয়কর রিটার্নের পাশাপাশি আয়করের হারও সকল করদাতারই জেনে রাখা উচিত। আয়করের হার বাৎসরিক আয়ের সাথে বৃদ্ধি পায়। সেকারণে যেকোন করদাতার আয়করের পরিমানও বিভিন্ন বছরে বিভিন্ন পরিমাণে আসতে পারে। আয়কর প্রদান করার সময় আয় অনুযায়ী করের হার জেনে সেই অনুযায়ী হিসাব করে আয়কর দিতে হবে। এখানে আয় অনুযায়ী আয়করের হারের তালিকা দেওয়া হচ্ছেঃ
স্বাভাবিক পুরুষ করদাতার ক্ষেত্রেঃ
আয়ের পরিমান | করের হার |
প্রথম ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | শূন্য |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ৫% |
পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ১০% |
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ১৫% |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ২০% |
এর পরবর্তী সকল আয়ের উপর | ২৫% |
মহিলা ও ৬৫ বছরের বেশী বয়সের পুরুষ করদাতার ক্ষেত্রেঃ
আয়ের পরিমান | করের হার |
প্রথম ৩,৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | শূন্য |
পরবর্তী ১,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ৫% |
পরবর্তী ৩,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ১০% |
পরবর্তী ৪,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ১৫% |
পরবর্তী ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত আয়ের উপর | ২০% |
এর পরবর্তী সকল আয়ের উপর | ২৫% |
এখানে উল্লেখ্য একটি বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা পর্যন্ত আয়কর ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করার ব্যবস্থা রয়েছে। আয়করের পরিমাণ এর চাইতে বেশী হলে আয়কর পরিশোধের জন্য পে-অর্ডার বা ব্যাংক ড্রাফট বা একাউন্ট-পেয়ী চেক ব্যবহার করতে হবে।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময়
বাংলাদেশে প্রত্যেক করদাতাকেই প্রতি বছর কর দিবসের মাঝেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ নভেম্বর সাধারণত কর দিবস পালন করা হয়ে থাকে। তাই প্রতি বছর ৩০ নভেম্বরের মাঝেই করদাতাদের তাদের আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এবার করোনা মহামারি ইস্যুতে এতদিন আয়কর রিটার্ন দাখিলের সুযোগ ছিল না। তাই ২০২১-২২ কর বছরে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সকল আয়কর অফিসেই আয়কর রিটার্ন গ্রহণ করা হবে।
এছাড়াও অনেকের বিভিন্ন সমস্যার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে করদাতা রিটার্ন দাখিলের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ফরমে উপকর কমিশনারের কাছে নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে আবেদন করতে পারবেন। আবেদন মঞ্জুর হলে করদাতা বর্ধিত সময়ের মাঝে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
আয়কর রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম
আয়কর রিটার্ন দাখিল করার কাজটি মূলত সশরীরে আয়কর অফিসে গিয়ে করতে হয়। আয়কর রিটার্ন দাখিল বলতে আসলে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী ফরম পূরণ করা এবং ফরমটি জমা দেওয়াকেই বোঝায়। সঠিক নিয়মে কিভাবে সঠিকভাবে ও সহজে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যাবে তার সম্পর্কে এখানে বলা হলো।
আয়কর রিটার্ন কোথায় দাখিল করতে হয়?
এদেশে প্রত্যেক শ্রেণীর করদাতার রিটার্ন দাখিলের জন্য আয়কর সার্কেল নির্দিষ্ট করা আছে। এ সম্পর্কিত তথ্যটি করদাতার টিন সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা থাকে। সে অনুযায়ী করদাতাকে ঐ নির্দিষ্ট সার্কেলের কর অফিসে উপস্থিত হয়ে রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
রিটার্ন দাখিল করার জন্য সঠিকভাবে পূরণ করা ফরম ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র একত্র করে নির্দিষ্ট অফিসে সশরীরে উপস্থিত হয়ে জমা দিতে হবে।
এছাড়াও প্রতি বছরই দেশে বছরের নির্দিষ্ট সময় আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২১-২২ কর বছরে এই মেলার সময়কাল ১ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর। এই মেলায় করদাতাগণ সহজেই রিটার্ন দাখিলের বুথে তাদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। রিটার্ন দাখিলের সময় করদাতা দেশের বাইরে অবস্থান করলে সেসময় চাইলে ঐ দেশে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসেও রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য নির্দিষ্ট ফরম ও বেশ কিছু কাগজপত্র তার সাথে যুক্ত করতে হয়। এই কাগজপত্রগুলো মূলত করদাতার আয়ের উৎস ও পরিমানের প্রমাণ হিসেবে প্রয়োজন হয়। করদাতাকে রিটার্ন দাখিলের সময় ভিন্ন ভিন্ন খাত অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাগজপত্র প্রদর্শন করতে হতে পারে। এমনকি প্রয়োজনে একাধিক খাত অনুযায়ী কাগজপত্রও প্রদর্শন করতে হতে পারে। আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে যেসকল কাগজপত্র প্রয়োজন হয় খাত অনুযায়ী তার তালিকা হলোঃ
বেতন খাতঃ
- করদাতার বেতন বিবরণী
- যদি বাৎসরিক আয়ের একটি অংশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ থেকে এসে থাকে তাহলে ঐ ব্যাংক হিসাবের ব্যাংক বিবরণী বা ব্যাংক সার্টিফিকেট
- বিনিয়োগ ভাতা বা কোন ধরনের বীমা প্রকল্পে যুক্ত থাকলে তার স্বপক্ষে প্রমাণাদি
নিরাপত্তা জামানতের সুদ খাত
- রিটার্ন দাখিলের বছরে কোন ধরনের বন্ড বা ডিবেঞ্জার কেনা হলে তার ফটোকপি
- সুদ আয় থাকলে সুদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন পত্র
- কোন ব্যাংক বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে বন্ড বা ডিবেঞ্জার কিনে থাকলে এই বিষয়ে যে ব্যাংক থেকে সুদ গ্রহণ করা ঐ ব্যাংকের সার্টিফিকেট বা ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়ন পত্র
গৃহ সম্পত্তি খাতঃ
- বাড়ির মালিকদের ক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়ার চুক্তিনামা বা ভাড়ার রশিদের কপি এবং প্রাপ্ত বাড়িভাড়া ব্যাংকে জমা রাখার ব্যাংক বিবরণী
- পৌর কর বা সিটি কর্পোরেশন কর বা ভূমি রাজস্ব প্রদানের রশিদ
- বাড়ি কেনা বা নির্মাণ কাজে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা হয়ে থাকলে ঐ ঋণের সুদের সমর্থনে ব্যাংক বিবরণী ও সার্টিফিকেট
ব্যবসা, অংশীদারি ফার্ম বা পেশা খাতঃ
- ব্যবসার, অংশীদারি ফার্ম বা পেশার আয় ব্যয়ের বিবরণী
মূলধনী লাভ থেকে আয়ের খাতঃ
- করদাতার স্থাবর সম্পত্তি বিক্রয় বা হস্তান্তর হলে তার দলিলের কপি
- মূলধনী উৎসে যদি আয়কর জমা হয়, তার চালানের ফটোকপি
- পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোন কোম্পানী শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে আয় করলে সে সংক্রান্ত প্রত্যয়ন পত্র
অন্যান্য উৎসের আয়ের খাত
- কোন ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানে রাখা নগদ টাকার লভ্যাংশ খাতে আয় থাকলে ব্যাংক বিবরণী এবং ডিভিডেন্ট ওয়ারেন্ট কপি বা সার্টিফিকেট
- কোন ব্যাংক বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা সঞ্চয়পত্র থেকে পাওয়া সুদের আয় থাকলে সঞ্চয়পত্র ভাঙ্গার সময় বা সুদ প্রাপ্তির সময় নেওয়া সার্টিফিকেটের কপি
- অন্য কোন ধরনের খাত থেকে আয় থাকলে ঐ খাতে আয়ের উৎসের জন্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র
কর পরিশোধের প্রমাণ স্বরুপ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- কর পরিশোধের সমর্থনে চালানের কপি, পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট, একাউন্ট-পেয়ী চেক
- যেকোন খাতের আয় হতে উৎসে আয়কর প্রদান করা হলে কর কর্তনকারী কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়ন পত্র
আয়কর রিটার্ন ফরম সংগ্রহ
আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য প্রথমেই রিটার্ন দাখিলের ফরম সংগ্রহ করতে হবে। বাংলাদেশে ২০১৬-১৭ কর বছর থেকে ব্যক্তি করদাতাদের জন্য IT-11GA2016 ফরম চালু হয়েছে। এছাড়াও প্রতি বছরই নতুন করে নির্দিষ্ট কিছু আয়কর রিটার্ন ফরম দেওয়া হয়। নতুন বা পুরাতন আয়কর রিটার্ন ফরম যে কেউ নিকটস্থ আয়কর অফিস থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়াও চাইলে কেউ অনলাইন থেকে আয়কর রিটার্ন ফরম ডাউনলোড করেও প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
এখানে কিছু আয়কর রিটার্ন দাখিলের ফরমের অনলাইনে ডাউনলোড করার লিংক দেওয়া হলোঃ
- ফরম IT-11GA2016- পিডিএফ ডাউনলোড লিংক
- ফরম IT-GHA2020- পিডিএফ ডাউনলোড লিংক
- ফরম IT-11GA- পিডিএফ ডাউনলোড লিংক
- ফরম IT-11 UMA- পিডিএফ ডাউনলোড লিংক
- ফরম IT-11 CHA- পিডিএফ ডাউনলোড লিংক
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এই ফরমগুলো যথাযথভাবে পূরণ করে নির্দিষ্ট আয়কর অফিসে জমা দিতে হবে। রিটার্ন ফরমের তথ্যগুলো পূরণের সময় ব্যক্তিগত আইনজীবীর পরামর্শ নিয়ে পূরণ করা উচিত। এতে করে সকল তথ্য ঠিকভাবে পূরণ করে যথাযথভাবে রিটার্ন দাখিল করা সম্ভব হয়।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম
বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ করার লক্ষ্যে দেশের সরকারি সকল কাজই অনলাইনে করার সুবিধা তৈরী করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার ব্যবস্থা শুরু করা হয়। এই সুবিধার ফলে করদাতাগণ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজেই মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটারের সাহায্যে অনলাইনে ঘরে বসেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এই পদ্ধতিতে আয়কর দেওয়ার ক্ষেত্রে করদাতাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলেই হবে। ফলে করদাতাকে আলাদা করে ফরম পূরণ করার ঝামেলাও পোহাতে হবে না অনলাইনে রিটার্ন দাখিল করলে।
অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য প্রথমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে রেজিষ্ট্রেশন করে নিতে হবে। এটি রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য করদাতাকে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট তৈরী করে নিতে হবে; এবং প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য সেটি হাতের কাছে রাখতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটে রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রথমে উপরের নিয়ম অনুযায়ী রেজিষ্ট্রেশন শেষ করতে হবে। তারপর এখান থেকেই নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যাবে। এখানে কিছু ধাপের মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দাখিলের পদ্ধতি দেওয়া হলোঃ
ধাপ-১
প্রথমে করদাতাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এই লিংকে https://etaxnbr.gov.bd ক্লিক করে সহজেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যাবে।
ধাপ-২
ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর সেখান থেকে ‘eReturn’ অপশনটি নির্বাচন করতে হবে।
ধাপ-৩
এরপরের পৃষ্ঠাটিতে প্রথমে নিচে লেখা ‘Registration’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। এরপর করদাতাকে ইংরেজিতে তার টিন নাম্বারটি ও তার মোবাইল নাম্বার লিখতে হবে। এবং নিচে দেওয়া ক্যাপচাটি পাশের ঘরে লিখতে হবে। এরপর ‘Verify’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-৪
এরপর নতুন একটি পৃষ্ঠা আসবে সামনে। এখানে সর্বপ্রথম ঘরেই মোবাইল ফোনে পাঠানো OTP চাওয়া হবে। পূর্ববর্তী পৃষ্ঠায় মোবাইল নাম্বারটি ঠিকভাবে দিলে করদাতা OTP-টি পেয়ে যাবেন। সেটি ঐ ঘরে লিখতে হবে। এরপর নিচে একটি পাসওয়ার্ড নির্বাচন করে লিখতে হবে এবং তারপর সেটি আরেকবার লিখে নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো দেওয়া শেষ হলে ‘Submit’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। এরপরেই অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করার জন্য রেজিষ্ট্রেশনের কাজ শেষ হয়ে যাবে।
ধাপ-৫
আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিলের জন্য প্রথমে রাজস্ব বোর্ডের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এই লিংকে প্রবেশ করে ওয়েবসাইটটিতে সহজেই প্রবেশ করা যাবে। এবং প্রবেশ করার পর ‘eReturn’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-৬
ক্লিক করার পর একটি পৃষ্ঠা আসবে সামনে। এখানে করদাতার ১২ ডিজিটের টিন নাম্বার ও এই ওয়েবসাইটে রেজিষ্ট্রেশন করার সময় ব্যবহার করা পাসওয়ার্ডটি লিখতে হবে। এরপর নিচে দেওয়া ক্যাপচাটি সমাধান করে ‘Sign in’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-৭
এরপরেই করদাতা তার নিজস্ব আয়কর রিটার্ন দেওয়ার জন্য সাইন-ইন হয়ে যাবেন। এখান থেকে এরপর বাম পাশের তালিকা থেকে ‘Return Submission’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-৮
এরপর আরেকটি পৃষ্ঠা সামনে আসবে। এখানে করদাতাকে প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিতে হবে। বিভিন্ন অপশনে লিখে পূরণ করে, আবার কোন কোনটিতে ক্লিক করে অপশন নির্বাচনের মাধ্যমে সঠিক তথ্য জমা দিতে হবে। প্রতিটি পৃষ্ঠার তথ্য দেওয়া শেষ হলে নিচের ‘Save and Continue’ বাটনটিতে ক্লিক করে পরের পৃষ্ঠায় যেতে হবে। এভাবে বেশ কতগুলো পৃষ্ঠা করদাতাকে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
ধাপ-৯
সবগুলো পৃষ্ঠার তথ্য ঠিকভাবে পূরণ করার পর করদাতাকে তার আয়কর রিটার্নের একটি সারসংক্ষেপ দেখানো হবে। এখানেই আয়করের জন্য প্রয়োজনীয় সকল হিসাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে করেই দেখানো হবে। সারসংক্ষেপ অনুযায়ী সবকিছু ঠিক থাকলে ‘View Return’ বাটনে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-১০
এরপর করদাতাকে তার রিটার্ন ফরমটি পূরণ করা অবস্থায় দেখানো হবে। এখান থেকে সবকিছু আবার একবার পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত সবারই। এখানে সবকিছু ঠিক থাকলে নিচের দিকে থাকা ‘Verification’ এর ঘরে থাকা ছোট বাক্সটিতে ক্লিক করে টিক চিহ্ন দিতে হবে। এবং তারপর ‘Submit return’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে।
এরপরই সফলভাবে করদাতার আয়কর রিটার্ন অনলাইনে দাখিল করা হয়ে যাবে। দাখিল করার পর আয়কর রিটার্নের একটি কপি করদাতাকে দেওয়া হবে। চাইলে এটি ডাউনলোড করে বা প্রিন্ট করেও পরবর্তী প্রয়োজনের জন্য সংরক্ষণ করা যাবে।
শূন্য আয়কর রিটার্ন
যেসব রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে করদাতার কোন করযোগ্য আয় থাকে না, তাকে শূন্য রিটার্ন বলা হয়। আমরা জানি যে, রিটার্ন দাখিল করা নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণীর মানুষের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়। যেমন যাদের আয় কর নিম্নসীমার নিচে, যারা শুধুমাত্র সঞ্চয়পত্র কিনতে বা ক্রেডিট কার্ড পেতে টিন সার্টিফিকেট তৈরী করেছিলেন ইত্যাদি। কিন্তু বাধ্যতামূলক নয় এরকম ক্ষেত্রেও অনেকের রিটার্ন দাখিল করার প্রয়োজন হতে পারে। তার একটি অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে টিন সার্টিফিকেট বাতিল করা, যে কাজে টানা তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এছাড়াও কারো আয় কর নিম্নসীমার নিচে তা দেখানোর জন্য, কোন বীমা প্রকল্পের জন্য সহ আরো অনেক প্রয়োজনেই শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে হয়।
কারা শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন?
শূন্য রিটার্ন যে কেউ দাখিল করতে পারবেন না। শুধুমাত্র যাদের আয় কর নিম্নসীমার নিচে তারাই শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। অর্থাৎ যারা কোন নির্দিষ্ট প্রয়োজনে টিন সার্টিফিকেট তৈরী করেছেন, কিন্তু করযোগ্য আয় নেই তারাই চাইলে শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
শূন্য আয়কর রিটার্ন দাখিল করার নিয়ম
শূন্য রিটার্ন দাখিল করার পদ্ধতি সাধারণ রিটার্ন দাখিলের মতই। শূন্য রিটার্ন দাখিল করার জন্য আবেদনকারীকে ব্যক্তি করদাতার জন্য নির্ধারিত ফরমে স্বাভাবিক নিয়মেই রিটার্ন দাখিল করতে হবে। রিটার্ন দাখিলের পরে হিসেব অনুযায়ী করদাতার বাৎসরিক আয় আয়কর নিম্নসীমার নিচে থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সেটি শূন্য রিটার্ন হিসেবে ধরা হবে। এবং করদাতার শূন্য রিটার্ন দাখিল করা হয়ে যাবে।
আয়কর রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হলে বা দেরি হলে জরিমানা
নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক একটি কাজ। নির্ধারিত সময়ের মাঝে রিটার্ন জমা দিতে ব্যর্থ হলে জরিমানা ও বিলম্ব সুদের শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কোন করদাতা আয়কর অধ্যাদেশের ৭৫ ধারা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে রিটার্ন জমা দিতে না পারলে আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারা অনুযায়ী জরিমানার সম্মুখীন হবে; এবং এরপর আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় তাকে আয়কর অধ্যাদেশের ৭৩ ধারা অনুযায়ী ৫০% (পঞ্চাশ শতাংশ) হারে সরল সুদ প্রদান করতে হবে। এছাড়াও রিটার্ন জমা দেওয়ার সময় উপকর কমিশনার করদাতার উপর বিলম্ব সুদ আরোপ করবেন।
এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, করদাতা যদি আবেদন করে রিটার্ন দাখিল করার সময় বর্ধিত করে তাহলে তার উপর শুধুমাত্র জরিমানা দেওয়ার বিষয়টি কার্যকর হবে না। কিন্তু পরবর্তীতে রিটার্ন দাখিলের সময় তার উপর একই হারে সরল সুদ ও বিলম্ব সুদ আরোপিত হবে।
শেষকথা
নিয়মিত আয়কর দেওয়া ও প্রতি বছর নিয়ম অনুযায়ী আয়কর রিটার্ন দাখিল করা প্রত্যেক করদাতার দায়িত্ব। রিটার্ন দাখিল করা ও এবিষয়ে সঠিক ধারণা না থাকায় অনেকেই রিটার্ন দাখিলে ভুল করে জরিমানার সম্মুখীন হন। তাই রিটার্ন দাখিল করার বিষয়ে অধিকাংশ প্রয়োজনীয় তথ্যই এই লেখাটিতে উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি। এটি আপনাদের রিটার্ন দাখিল করার জন্য অনেকখানি সাহায্য করবে বলে আশা করছি।
অনবরত জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
১. আয়কর নিম্নসীমা কি প্রতিটি খাতের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবে হিসাব করা হয়?
উত্তরঃ আয়কর নিম্নসীমা একজন করদাতার সকল খাতের মিলিত আয়কে যোগ করে হিসাব করা হয়। অর্থাৎ করদাতার আয়কর রিটার্ন প্রযোজ্য এরকম খাতের সবগুলোর মিলিত আয় যদি করসীমা অতিক্রম করে তাহলেই তাকে রিটার্ন আবশ্যিকভাবে দাখিল করতে হবে।
২. কোন সরকারি কর্মচারী বা কর্মকর্তার মাসিক বেতন যদি বছরের কোন সময় ১৬,০০০ টাকা থাকে এবং পরবর্তীতে কমে যায়, তাকে কি আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ। কোন সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীর মাসিক বেতন বছরের যেকোন সময় ১৬,০০০ টাকা বা তার বেশী হলেই তাকে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে। তার মাসিক বেতন যদি কমে গিয়ে বাৎসরিক মোট আয় করসীমার নিচে চলে যায়, সেক্ষেত্রে ঐ কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে শূন্য রিটার্ন দাখিল করতে হবে।
৩. আয়ের উৎস একাধিক ভিন্ন খাত থেকে হলে কি প্রতিটি খাতের জন্যই আলাদা আলাদা কাগজপত্র জমা দিতে হবে?
উত্তরঃ প্রতিটি ভিন্ন খাতের জন্য আয়কর রিটার্নের সাথে ঐ খাত অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দিতে হবে। সকল কাগজপত্রই রিটার্ন ফরমের সাথে একত্র করে জমা দিতে হবে।
৪. পুরাতন আয়কর রিটার্ন ফরম দিয়েও কি চাইলে রিটার্ন দাখিল করা যাবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, যাবে। ২০১৬ সালের পর থেকে বিতরণ করা রিটার্ন ফরমগুলোর প্রায় সবগুলোই এখনো ব্যবহারযোগ্য। তাই কেউ চাইলে এই সময়ের মাঝের যেকোনো সময়ের আয়কর রিটার্ন ফরমের মাধ্যমেই রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন। এমনকি আয়কর রিটার্ন ফরমের ফটোকপিও গ্রহণযোগ্য।
৫. কেউ কি প্রয়োজনে তার কর অঞ্চল ছাড়া অন্য কোন অঞ্চলের কর অফিসে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন?
উত্তরঃ স্বাভাবিক নিয়মে কাউকে তার রিটার্ন নিজস্ব কর অঞ্চলের কর অফিসেই দাখিল করতে হবে। কিন্তু বিশেষ অসুবিধাজনিত কারণে প্রয়োজন হলে অসুবিধা বর্ণনা করে উপকর কমিশনারের বরাবর আবেদন করতে হবে। তিনি আবেদন মঞ্জুর করলে নিজস্ব কর অফিসের ছাড়া অন্য কোন অঞ্চলের কর অফিসে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা যাবে।
৬. শূন্য রিটার্ন দাখিল করার পর কি টিন সার্টিফিকেট বাতিল হয়ে যায়?
উত্তরঃ না। টিন সার্টিফিকেট বাতিল করতে হলে টানা তিন বছর শূন্য রিটার্ন দাখিল করে উপকর কমিশনারের নিকট টিন সার্টিফিকেটটি বাতিল করার জন্য আবেদন করতে হয়। শুধুমাত্র আবেদনটি মঞ্জুর হলেই টিন সার্টিফিকেট বাতিল হয়ে যাবে।
৭. শূন্য রিটার্ন দাখিল করার পরের বছর যদি আবার করযোগ্য আয় হয়ে থাকে, তাহলে কি কর ও রিটার্ন জমা দিতে হবে?
উত্তরঃ শূন্য রিটার্ন দাখিল করার পরের বছর করযোগ্য আয় থেকে থাকলে করদাতাকে অবশ্যই স্বাভাবিকভাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে এবং কর দিতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ