ফুটবল খেলার নিয়মনীতি !!!!!

 



১) খেলার মাঠ 

ফুটবল খেলার মাঠটি আয়তাকার আকৃতির হয়ে থাকে। মাঠের তল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক অথবা সম্পূর্ণ কৃত্রিম হতে হয়। কৃত্রিম মাঠ হলে তার রঙ অবশ্যই সবুজ হতে হবে।  

মাঠের দাগসমূহ 

  • খেলার মাঠের দাগগুলো অবশ্যই নিরাপদ উপাদান দিয়ে তৈরি হতে হবে। 
  • আয়তাকার মাঠের সীমানা নির্দেশকারী ৪টি লাইনের মধ্যে লম্বা দুটি লাইনকে বলে টাচলাইন। অপর দুটি লাইনকে বলে গোললাইন।  
  • সম্পূর্ণ মাঠ একটি মধ্যরেখা দ্বারা বিভাজিত থাকে। মধ্যরেখার ঠিক মাঝ বরাবর স্থানকে কেন্দ্র করে একটি বৃত্ত আকা হয়। বৃত্তটির নাম মধ্যবৃত্ত। এর ব্যাসার্ধ ৯.১৫ মিটার।  
  • প্রত্যেক লাইনের প্রস্থ সমান হতে হবে। এবং কোন লাইনের প্রস্থই ৫ ইঞ্চির বেশি হতে পারবে না। 
  • কোনো খেলোয়াড় কোনো ভাবেই কোনো দাগের পরিবর্তন আনতে পারবেন না। 

মাঠের আয়তন

দৈর্ঘ্যঃ সাধারণ খেলায় ৯০-১২০ মিটার। আন্তর্জাতিক খেলায় ১০০-১১০ মিটার। 

প্রস্থঃ সাধারণ খেলায় ৪৫-৯০ মিটার। আন্তর্জাতিক খেলায় ৬৪-৭৫ মিটার। 

গোল এরিয়া 

দুইটি গোলপোস্ট থেকেই গোললাইন বরাবর বাইরের দিকে ৫.৫ মিটার লম্বা দু’টি লাইন টানতে হবে। এরপর গোললাইন থেকে মাঠের ভিতরে ৫.৫ মিটার লম্বা দু’টি লাইন টানতে হবে। সেই দু’টি লাইনকে আরেকটি লাইন দিয়ে সংযুক্ত করে দিতে হবে। ফলে যেই আয়তক্ষেত্রটি তৈরি হবে সেটিই গোল এরিয়া।

ফুটবল খেলার মাথের আসল মাপ

পেনাল্টি এরিয়া

গোল এরিয়া নির্ণয়ের মতো করেই গোলপোস্ট থেকে দুই দিকে দু’টি লাইন টানতে হবে। প্রতিটি লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ১৬.৫ মিটার। প্রতিটি লাইনের শেষ মাথা থেকে মাঠের ভিতরে ১৬.৫ মিটার লম্বা আরো দুইটি লাইন টানতে হবে। লাইন দুইটিকে সংযুক্ত করে দিলে যেই আয়তক্ষেত্র তৈরি হবে তাই পেনাল্টি এরিয়া। পেনাল্টি এরিয়ার ভিতরে একটি পেনাল্টি মার্ক আঁকতে হবে। এর অবস্থান দুইটি গোলপোস্টের ঠিক মাঝ থেকে ১১ মিটার দূরে। পেনাল্টি মার্ককে কেন্দ্র করে ৯.১৫ মিটার ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্তচাপ আঁকতে হবে। বৃত্তচাপটি শুধু পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে দৃশ্যমান থাকবে।

কর্নার এরিয়া 

মাঠের চার কোণে চারটি কর্নার এরিয়া থাকবে। প্রতিটি কোণকে কেন্দ্র করে ১ মিটার ব্যাসার্ধ নিয়ে মাঠের ভেতরে কর্নার এরিয়া আঁকতে হবে। 

গোল 

  • দুইটি গোলপোস্ট ও একটি ক্রসবার নিয়ে আয়তাকার আকৃতিটিকে একনামে ‘গোল’ ডাকা হয়। খেলোয়াড়রা এর ভেতরে বল ঢুকিয়েই ‘গোল’ করে থাকেন।  
  • গোলের অবস্থান দুইটি গোললাইনের ঠিক মাঝ বরাবর হবে। 
  • দুইটি গোলপোস্টের মধ্যবর্তী দূরত্ব ৭.৩২ মিটার। ভূমি থেকে ক্রসবারের উচ্চতা হবে ২.৪৪ মিটার। 
  • গোলপোস্ট ও ক্রসবারের রঙ অবশ্যই সাদা হবে। প্রতিটি বার একই প্রস্থের হতে হবে।

ফুটবল খেলার গোলপোস্টের মাপ

২) বল

ফুটবল খেলায় সবচেয়ে জরুরী জিনিসটিই হল বল। বল না থাকলে তো আর ফুটবল সম্ভব না। তবে সেই বল সম্পর্কেও রয়েছে কিছু নিয়ম কানুন।

আকার ও আয়তন

  • বলটি অবশ্যই সম্পূর্ণ গোলাকার হবে। 
  • বলটির পরিধি হবে ৬৮-৭০ সেন্টিমিটার। 
  • ওজন ৪১০-৪৫০ গ্রাম। 
  • বলের ভেতর বাতাসের চাপ হবে ০.৬-১.১ অ্যাটমোস্ফিয়ার। 

বল পরিবর্তন

ফুটবল খেলার বল চাইলেই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। বল পরিবর্তনের সিধান্ত শুধু মাত্র রেফারি নিতে পারেন। রেফারি বলটিকে খেলার অযোগ্য বিবেচিত করলে তা বদলে নতুন বল ব্যবহার করা হয়। 

যদি বলটি কিক-অফ, গোল-কিক, কর্নার কিক, ফ্রি কিক, পেনাল্টি কিক ও থ্রো-ইন এর সময়ে নষ্ট হয় তাহলে শটগুলো আবারো করা হয়। যদি পেনাল্টি-কিক এর সময় বলটি নষ্ট হয় এবং নষ্ট হওয়ার আগে গোলকিপার অথবা গোলপোস্ট/ক্রসবার না ছুঁয়ে থাকে তবে আবারো পেনাল্টি-কিক করার সুযোগ দেওয়া হয়। 

৩) খেলোয়াড়

খেলোয়াড়রা খেলার প্রাণ। তাদের সুকৌশলের কারণেই ফুটবল খেলা এতটা প্রাণবন্ত ও উত্তেজনাময়। প্রত্যেক খেলোয়াড়কে  ফুটবল খেলার সকল নিয়ম মেনে চলতে হয়। এমনকি খোদ খেলোয়াড় সম্পর্কেও কিছু নিয়ম রয়েছে। 

খেলোয়াড়ের সংখ্যা 

  • খেলায় দুইটি দল থাকবে। প্রত্যেক দলে সর্বোচ্চ ১১ জন খেলোয়াড় থাকতে পারবে। 
  • প্রতি দলে একজন গোলকিপার থাকা আবশ্যক। 
  • কোনো দলে ৭ জনের কম খেলোয়াড় থাকলে খেলা শুরু করা যাবে না। 
  • কোনো খেলোয়াড় খেলার মধ্যে সম্পূর্ণ ইচ্ছাকৃতভাবে খেলার মাঠ ত্যাগ করায় তার দলের মোট খেলোয়াড় সংখ্যা ৭ এর কমে নেমে আসলেও রেফারি খেলা থামাতে বাধ্য নন। 
  • খেলা শুরুর আগেই প্রত্যেক খেলোয়াড় ও বদলি খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণা করতে হবে। 

দলনেতা

ফুটবল দলের দলনেতা একজন থাকে। মাঠের ভেতরে দলের সার্বিক পরিচালনার জন্য দলনেতা দায়ী। তবে দলনেতার কোন আলাদা নির্বাহী ক্ষমতা নেই।

অতিরিক্ত খেলোয়াড়

বিভিন্ন ধরনের ম্যাচে অতিরিক্ত খেলোয়াড়ের সংখ্যা বিভিন্ন রকমের হতে পারে।

  •  আন্তর্জাতিক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১২ জন খেলোয়াড়কে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে রাখা যায়। সর্বোচ্চ ৩ বার খেলোয়াড় বদল করা যায়। তবে করোনার কারণে এখন ৫ বার বদলের সুযোগ রয়েছে। 
  • জাতীয় পর্যায়ের ‘এ’ দল গুলোর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় রাখার সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৬ বার খেলোয়াড় বদল করা যায়।
  • অন্যান্য ঘরোয়া ম্যাচে দুই দল ও রেফারির ঐক্যমতের ভিত্তিতে অতিরিক্ত খেলোয়াড় ও তাদের বদলির সংখ্যা ঠিক করা যায়।

৪) খেলোয়াড়ের সরঞ্জাম

ফুটবল খেলায় খেলোয়াড়রা খুব বেশি কিছু বহন করতে পারে না। ক্রিকেট খেলার মতো গ্লাভস, ব্যাট কিংবা অন্যান্য সরঞ্জাম এ খেলায় অনুপস্থিত। তবে কিছু জিনিস প্রতিটি আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলোয়াড়ের সাথে থাকা আবশ্যক। 

  • হাতা সহ শার্ট (জার্সি)।
  • শর্টস।
  • মোজা। উল্লেখ্য যে, মোজার ওপর টেপ পড়লে অবশ্যই তার রঙ মোজার রঙের সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে। 
  • শিনগার্ড।
  • জুতা।

তবে গোলকিপারদ্বয় চাইলে ট্র্যাকসুট (Tracksuit) পড়তে পারেন। আর যদি খেলার মধ্যে কোনো খেলোয়াড়ের জুতা বা শিনগার্ড হারিয়ে যায় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব তা আবার পড়তে হবে। তবে খালি পায়ে গোল করলেও সেটি গোল হিসেবেই গণ্য হবে।

এছাড়া প্রত্যেক খেলোয়াড়কে একই রঙের জার্সি পড়তে হবে। কিন্তু গোলকিপারকে অবশ্যই আলাদা রঙের জার্সি পড়তে হবে যাতে তাকে দল থেকে আলাদা করা যায়। কোনো খেলোয়াড় হেডকভার পড়লে তা জার্সির রঙেরই হতে হবে। এছাড়াও কোনো খেলোয়াড়ই খেলার মধ্যে বিপজ্জনক কিছু বহন করতে পারবেন না। যদি করে তাহলে রেফারি তাকে বাইরে বের করে দেবেন এবং রেফারির অনুমতি ছাড়া সে আর খেলায় প্রবেশ করতে পারবে না।  (ইপিটিএস) বাদে অন্য যেকোনো যন্ত্রের ব্যবহারও সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

৫) রেফারি

রেফারি হলেন যেকোনো ফুটবল খেলার সার্বিক নিয়ন্ত্রক। খেলা চলাকালীন যেকোনো বিষয়ে রেফারির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। পুরো খেলাকে নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা করার দায়িত্ব তার। এবং নিয়মের ব্যাতায় ঘটলে যেকোনো খেলোয়াড়কে নিয়ম অনুযায়ী শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা তার রয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি লাল ও হলুদ কার্ডের ব্যবহার করেন। হলুদ কার্ড এর সাহায্যে তিনি কোনো খেলোয়াড়কে সাবধান করতে পারেন। আর লাল কার্ডের সাহায্যে কোনো খেলোয়াড়কে ওই খেলা থেকে বাতিল করে দিতে পারেন। আবার কোনো খেলোয়াড় দুইটি হলুদ কার্ড পেলে তা লাল কার্ড হিসেবেই গণ্য হয়।

ফুটবল খেলার মধ্যে নিয়ম রক্ষার পাশাপাশি রেফারি অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেন। যেমন গোল হয়েছে কি হয় নি। ফাউল হয়েছে কি হয় নি। তার পাশাপাশি কোনো খেলোয়াড় আহত হলে খেলা চালু থাকবে নাকি সাময়িকভাবে বন্ধ হবে তাও তিনি নির্ধারণ করেন। এছাড়া খেলোয়াড়রা বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে তিনি সেটির মধ্যস্ততা করেন ও খেলা বন্ধ বা চালু করেন। বাইরের কোনো কারণে খেলায় সমস্যা হলে খেলা বন্ধ করা কিংবা চালু রাখার সিদ্ধান্ত তিনি নিতে পারেন। খেলা চলাকালীন তিনি নানা ধরনের সংকেতের সাহায্যে খেলাকে নিয়ন্ত্রণ করেন। সংকেতগুলো নিচের চিত্রটি দেখলে ভালো বুঝতে পারবেন।

ফুটবল খেলার রেফারি

রেফারির সরঞ্জাম 

একজন রেফারির সাথে বেশ কিছু সরঞ্জাম থাকা বাঞ্চণীয়। তার মধ্যে কিছু সরঞ্জাম রাখাটা আবশ্যক। সেগুলো হলোঃ

  • হুইসেল
  • ঘড়ি
  • লাল ও হলুদ কার্ড
  • নোটবুক অথবা এমন কোনো বস্তু যার সাহায্যে তিনি খেলার রেকর্ড রাখতে পারবেন। 

রেফারিরা চাইলে এগুলো বাদেও কিছু জিনিস সাথে রাখতে পারেনঃ

  • ম্যাচের অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বাজার/ব্লিপ ফ্ল্যাগস অথবা হেডসেট। 
  • ইপিটিএস (EPTS – Electronic Performance & Tracking Systems) অথবা অন্য কোন মনিটরিং যন্ত্র। 

তবে কোন রেফারি কোনোভাবেই মাঠের ভেতর গহনা কিংবা কোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন না। ক্যামেরাও না। এবং খেলা শেষে রেফারিকে পুরো খেলার একটা বর্ণনা ম্যাচ কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করতে হবে। 

৬) রেফারি ব্যাতীত কর্তৃপক্ষ

ফুটবল খেলাটি সময়ের হিসাবে খুব দীর্ঘ না হলেও এর মাঠের পরিসর বেশ বড়। এত বড় মাঠে একজন রেফারির পক্ষে সব দিকে খেয়াল রাখা সম্ভব হয় না। আর তাই রেফারির পরিশ্রম লাঘব করতে আরো কিছু মানুষ কাজ করেন। তারাই রেফারি ব্যাতীত মাঠের কর্তৃপক্ষ। এই কর্তৃপক্ষ হিসেবে থাকেন

  • দুইজন সহকারী রেফারি।
  • একজন ফোর্থ অফিসিয়াল (Fourth Official)।
  • দুইজন অতিরিক্ত সহকারী রেফারি।
  • সংরক্ষিত সহকারী রেফারি।

এছাড়াও মাঠের বাইরে টিভি স্ক্রিনের সামনে থাকেন একজন ভিডিও সহকারী রেফারি ও ভিডিও সহকারী রেফারির অন্তত একজন সহকারী।

সহকারী রেফারি

কর্তৃত্বের দিক দিয়ে রেফারির পরেই সহকারী রেফারির স্থান। সহকারী রেফারি খেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখেনঃ

  • বল সম্পূর্ণভাবে মাঠের বাইরে গিয়েছে কি না তা লক্ষ্য করা। কোন দল কর্নার কিক, ফ্রি কিক, গোল কিক পাবে তা নির্ধারণ করা।
  • অফসাইড হয়েছে কি না তা নির্ধারণ করা।
  • খেলোয়াড় পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়লে সংকেত দেওয়া।
  • পেনাল্টি কিক এর সময় খেলোয়াড় বল স্পর্শ করার আগেই গোলকিপার গোললাইন থেকে এগিয়ে আসলে তা লক্ষ্য করা।

ফুটবল খেলার সহকারি রেফারি

এসব কাজের বাইরেও খেলোয়াড় পরিবর্তন, খেলোয়াড়ের সরঞ্জাম নীরিক্ষণ, বল পরিবর্তন ইত্যাদি কাজ ফোর্থ অফিসিয়ালরা করে থাকেন। এছাড়া অতিরিক্ত সহকারী রেফারিরা মূলত সহকারী রেফারিদের কাজে সহায়তা করে থাকেন। 

ভিডিও সহকারী রেফারি (VAR)

ভিডিও সহকারী রেফারিকে বলা যায় ফুটবলের আধুনিক সংযোজন। এই রেফারি মাঠে নয় বরং থাকেন টিভির সামনে। জুমড ইন (Zoomed In) করা ক্যামেরার সাহায্যে তিনি সার্বক্ষণিক বল ও তার আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করেন। ফলে কোনো ঘটনা যদি রেফারি বা সহকারী রেফারির চোখ এড়িয়ে যায় তবে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বর্তমান সময়ে গোল, পেনাল্টি বা ফ্রি কিক সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের সময় ভিডিও সহকারী রেফারির প্রয়োজন হয়। তবে এই ভিডিও সহকারী রেফারি কখনোই একা দায়িত্ব পালন করেন না। কোনো সিদ্ধান্ত রিভিউ করার সময় তার অন্তত একজন সহকারী সার্বক্ষণিক টিভির দিকে তাকিয়ে থাকেন।

৭) খেলার সময়

ফুটবল খেলা যে ৯০ মিনিটব্যাপী চলে তা হয়তো অনেকেই জানেন। ৯০ মিনিটের এই খেলা ৪৫ মিনিটের দু’টি ভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগ শেষ হওয়ার পরে একটি বিরতি নেওয়া হয় যাকে বলে হাফ টাইম। এই হাফ টাইম এর ব্যাপ্তি সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট হতে পারে। এ সময় খেলোয়াড়রা বিশ্রাম করেন অথবা পরবর্তী কৌশল ঠিক করেন।

সময় বৃদ্ধি

খেলার দুইটি ভাগেই রেফারি কিছুটা সময় বৃদ্ধি করতে পারেন। সাধারণত রেফারি যেসব কারণে সময় বৃদ্ধি করেন। 

  • খেলোয়াড় পরিবর্তন। 
  • আহত খেলোয়াড়কে পর্যবেক্ষণ অথবা অপসারণ। 
  • সময় নষ্ট।
  • ম্যাচে বিশৃঙ্খলা।
  • চিকিৎসা বিরতি।
  • ভিডিও সহকারী রেফারি কর্তৃক রিভিউ।

এছাড়া অন্য জরুরী কারণেও রেফারি সময় বৃদ্ধি করতে পারেন। তবে তিনি খেলার প্রথমার্ধের জন্য কোনোভাবেই খেলার দ্বিতীয়ার্ধে সময় বৃদ্ধি করতে পারবেন না। উল্লেখ্য যে, কোনো পেনাল্টি কিক করার কথা থাকলে তা সময় শেষ হলেও করা যাবে।

৮) খেলা শুরুর প্রক্রিয়া

ফুটবল খেলা শুরু হয় সাধারণত দুইটি প্রক্রিয়ায়। একটি হল কিক অফ, আরেকটি হল ড্রপড বল। সাধারণত খেলার প্রথমার্ধ ও দ্বিতীয়ার্ধ শুরু হয় কিক অফ এর মাধ্যমে। এছাড়াও অতিরিক্ত সময়ের খেলাও কিক অফের সাহায্যে শুরু হয়। অপরদিকে রেফারি যদি কোনো কারণে খেলা থামান তবে খেলা ড্রপড বলের সাহায্যে শুরু হয়। 

কিক অফ

  • যেই দল টসে জিতেছে তারা ঠিক করে তারা কিক অফ করতে চায় নাকি মাঠের কোন অংশ তাদের হবে তা ঠিক করতে চায়। 
  • যদি টস জেতা দল কিক অফ করতে চায় তবে বিপক্ষ দল মাঠের কোন অংশ তাদের হবে তা ঠিক করার সুযোগ পায়। 
  • যদি টস জেতা দল মাঠের কোন অংশ তাদের হবে সেটি ঠিক করে তবে বিপক্ষ দল কিক অফ করার সুযোগ পায়। 
  • কিক অফের সময় প্রত্যেক দলের খেলোয়াড়দের অবশ্যই তাদের অংশে থাকতে হয়।
  • বলটি মাঠের সেন্টার মার্কে স্থির অবস্থায় থাকে। রেফারি সংকেত দেওয়ার পরেই কিক অফ করা হয়। 
  • কিক অফ করার সময় বিপক্ষ দলের সকল খেলোয়াড়কে বল থেকে অন্তত ৯.১৫ মিটার দূরে থাকতে হয়। 
  • কিক অফের কারণে বল চলা শুরু করলে খেলা শুরু হয়ে যায়। কোনো খেলোয়াড় কিক অফ থেকে সরাসরি গোল দিতে পারলে সেটি গোল হিসেবেই গণ্য হয়।
  • যেই খেলোয়াড় কিক অফ করছেন তিনি যদি বল অন্য কোনো খেলোয়াড় স্পর্শ করার আগেই আবার স্পর্শ করেন তাহলে বিপক্ষ দল একটি পরোক্ষ (Indirect) ফ্রি কিক পায়। 

ড্রপড বল

রেফারি যদি খেলা থামান তাহলে বলটিকে একটি ড্রপ দেওয়ার মাধ্যমে আবার খেলা শুরু হয়। এটিকেই বলে ড্রপড বল।

  • খেলা থামার সময় যদি বলটি কোনো দলের পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরে থাকে তবে বলটি পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরেই গোলকিপারের জন্য ড্রপ করা হয়। 
  • মাঠের অন্য যেকোনো অংশে খেলা থামলে ঠিক যেখানে খেলা থেমেছে সেখানেই ড্রপ দিয়ে খেলা শুরু হয়। 
  • বল ড্রপ করার সময় যেই খেলোয়াড় শেষবার বল স্পর্শ করেছিলো শুধু তিনিই বলের কাছে থাকতে পারেন। অন্য সকল খেলোয়াড়কে নিজ নিজ স্থানে (বল থেকে অন্তত ৪ মিটার দূরে) থাকতে হয়। 
  • বল মাটি স্পর্শ করার সাথে সাথেই খেলা শুরু হয়। 
  • মাটি স্পর্শ করার আগেই কোনো খেলোয়াড় বল স্পর্শ করলে অথবা কোনো খেলোয়াড় স্পর্শ করার আগেই বল গড়িয়ে মাঠের বাইরে চলে গেলে আবার বল ড্রপ করা হয়। 

৯) বল খেলার মধ্যে ও বাইরে 

ফুটবল খেলার সময় বল অনেক সময়ই খেলার বাইরে চলে যায়। তখন যথাযথ নিয়ম অনুসারে খেলা আবার শুরু করতে হয়।

বল খেলার বাইরে গণ্য হবে যদিঃ

  • বল খেলার মাঠের বাইরে চলে যায়। 
  • রেফারি কর্তৃক খেলা থামানো হয়।
  • বলটি ম্যাচ কর্তৃপক্ষের কারো গায়ে লাগে এবং সেই কারণে কোনো দল বিপক্ষ দলকে দারুণ আক্রমণের সুযোগ পায় অথবা বলটি সরাসরি গোল হয়ে যায় কিংবা যেই দলের কাছে বল ছিল তাদের হাতছাড়া হয়ে বিপক্ষ দল বল পেয়ে যায়। 

এ সকল ক্ষেত্রে বল খেলার বাইরে গণ্য হবে এবং একটি ড্রপড বলের সাহায্যে খেলা শুরু হবে। এছাড়া বাকি সময় বল খেলার ভেতরে গণ্য হবে। এমনকি কোনো ম্যাচ কর্তৃপক্ষের গায়ে লাগার পরেও যদি উপরিউক্ত কোনো ঘটনা না ঘটে তাহলে ম্যাচ চলবে। গোলপোস্ট, ক্রসবার কিংবা কর্নার পোস্টে বাড়ি খেয়ে বল আবার মাঠে ফেরত আসলেও খেলা চলবে। 

১০) খেলার ফলাফল নির্ধারণ

ফুটবল খেলার ফলাফল নির্ধারণ হয় গোলের সংখ্যার মাধ্যমে। সহজ ভাষায় যেই দলের গোল সংখ্যা বেশি সেই দলই বিজয়ী। তবে গোল হওয়ার কিছু শর্ত আছে। 

গোল

  • একটি গোল তখনই হবে যখন বলটি কোন দলের গোলপোস্ট ও ক্রসবারের ভেতরে দিয়ে প্রবেশ করবে। এ ক্ষেত্রে পুরো বলটিকে গোললাইন পার করতে হবে। যদি বলের কোনো অংশ লাইনের ওপরে থাকে তবে তা গোল বলে গণ্য হবে না। 
  • বল গোললাইন পুরোপুরি পার হওয়ার আগেই যদি রেফারি গোলের সংকেত দেন তাহলে খেলা আবার ড্রপড বলের মাধ্যমে শুরু হবে।

ফুটবল খেলার গোলের নিয়ম

দুই দলই সমান সংখ্যক গোল করলে স্বভাবতই ম্যাচটি ড্র হিসেবে নির্ণিত হবে। সে ক্ষেত্রে ড্র বা টাই ভাঙার জন্য টাইব্রেকার পদ্ধতির আশ্রয় নেওয়া হয়।

এক্ষেত্রে দুটি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।

  • এওয়ে (Away) গোল।
  • পেনাল্টি কিক।

পেনাল্টি কিক

  • প্রত্যেক দল সমান সংখ্যক পেনাল্টি কিক করতে পারবে। 
  • পেনাল্টির জন্য সর্বোচ্চ সময় হবে ১৫ মিনিট। 
  • কোন গোল পোস্টে পেনাল্টি কিক করা হবে তা রেফারি টসের মাধ্যমে ঠিক করবেন। 
  • টসে জেতা দল ঠিক করবে তারা প্রথম কিক করবে নাকি দ্বিতীয় কিক। 
  • প্রত্যেক দলকে সমান সংখ্যক খেলোয়াড় নির্ধারণ করতে হবে যারা পেনাল্টি কিক করবে। তবে আগেই খেলা থেকে চলে গেছে এমন কোন খেলোয়াড় পেনাল্টিতে অংশ নিতে পারবে না। 
  • গোলকিপার তার দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে দলের অন্য কোনো খেলোয়াড় তার দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারে। 
  • যেই গোলকিপার গোল রক্ষা করতে দাঁড়াবে, তার বিপক্ষ দলের গোলকিপারকে অবশ্যই পেনাল্টি এরিয়ার ঠিক বাইরে গোল লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। যাতে করে পরবর্তীতে সে দ্রুতই গোলপোস্টে পৌঁছাতে পারে। 
  • গোলকিপার ব্যাতীত অন্য কোনো খেলোয়াড় যদি খেলতে অপারগ হন তাহলে তার স্থানে অন্য কেউ দায়িত্ব নিতে পারবেন না। 
  • প্রত্যেক খেলোয়াড় একবারই পেনাল্টি কিক করতে পারবেন। সকল নির্ধারিত খেলোয়াড় অন্তত একবার পেনাল্টি কিক করার পরে কেউ আবার কিক করতে পারবেন। 
  • প্রথমে ৫টি গোলের মধ্যে যেই দল বেশি গোল করবে তারাই বিজয়ী হবে। দুই দল সমান সংখ্যক গোল করলে পেনাল্টি কিক এর সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। সমান সংখ্যক পেনাল্টি কিকের মধ্যে যাদের গোল বেশি হবে তারা জিতবে। 

১১) অফসাইড

ফুটবলে অফসাইড বেশ পরিচিত শব্দ হলেও অনেকেই এর মানে জানেন না। একজন খেলোয়াড় অফসাইড হিসেবে গণ্য হবেন যদিঃ

  • খেলোয়াড় বিপরীত দলের অংশে থাকেন এবং সেখানে বিপরীত দলের কোন খেলোয়াড় না থাকে। 
  • খেলোয়াড় বিপরীত দলের গোল লাইনের কাছে থাকেন কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলের খেলোয়াড়রা তার আরো সামনে অবস্থান করেন।
  • তবে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের খেলোয়াড় যদি পাশে অথবা পেছনে থাকে তবে অফসাইড হবে না। 

উল্লেখ্য যে, কোন অফসাইড খেলোয়াড় গোল দিলে তা গোল হিসেবে গণ্য হয় না এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দল একটি গোল কিক প্রাপ্ত হয়। 

১২) ফাউল এবং অসদাচারণ

ফুটবল খেলায় ফাউল অত্যন্ত পরিচিত শব্দ। বিপরীত পক্ষের কোনো খেলোয়াড়কে অন্যায়ভাবে আঘাত করা বা বাধা দেওয়াকেই বলে ফাউল।ফুটবল খেলার জন্মলগ্ন থেকেই ফাউল এর চল রয়েছে। ফুটবলে ফাউলের কারণে আদিতে অনেক খেলোয়াড়ের প্রাণও গিয়েছে। তাই খেলার মধ্যে যেকোনো ধরনের ফাউল বা অসদাচারণ সীমিত করতে অনেক ধরনের নিয়ম ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষত হলুদ ও লাল কার্ডের প্রচলন ফাউল ঠেকানোর জন্যই হয়েছে। এছাড়াও কোনো খেলোয়াড় ফাউল করলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে অনেক সময়ই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ফ্রি কিক এবং পেনাল্টি কিক দেওয়া হয়।

প্রত্যক্ষ (Direct) ফ্রি কিক

কোন দলকে প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক দেওয়া হবে যদি তাদের বিপরীত দলের কোনো খেলোয়াড় নিম্নোক্ত ফাউলগুলো করে।  

  • এক খেলোয়াড় অপর খেলোয়াড়ের দিকে আক্রমণাত্নকভাবে তেড়ে যায়। 
  • ধাক্কা দেয়। 
  • ঝাঁপিয়ে পড়ে।
  • লাথি দেয় বা লাথি দেওয়ার চেষ্টা করে।
  • আঘাত করে বা আঘাত করার চেষ্টা করে। 
  • ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে ফেলে দেয় বা ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে।
  • বিপরীত দলের খেলোয়াড়কে ধরে রাখে।
  • হ্যান্ডবল করে অর্থাৎ হাতে বল লাগালে বা কোনোভাবে লাগলে।
  • কাউকে কামড়ালে বা থুতু দিলে।
  • বলের দিকে অথবা কোন ব্যাক্তির দিকে কিছু ছুঁড়ে মারলে।

হ্যান্ডবলফুটবল খেলায় হ্যান্ডবলের নিয়ম

ফুটবল খেলায় হ্যান্ডবলের নিয়ম সম্পর্কে কিছু না বললেই নয়। যখন ফুটবল কোনো খেলোয়াড় হাতে স্পর্শ করে তখনই তা হ্যান্ডবল হিসেবে গণ্য হবে। তবে কাঁধ থেকে বগল অবধি হাতের অংশে বল স্পর্শ করলে তা হ্যান্ডবল হিসেবে গণ্য হবে না। তার নিচে স্পর্শ করলেই হ্যান্ডবল হবে। কিন্তু প্রতিটি হ্যান্ডবল অপরাধ নয়। যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে হাতে বল লেগে যায় তবে খেলোয়াড় শাস্তি পাবেন না। হ্যান্ডবল অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে তখনি যখনঃ 

  • খেলোয়াড় বল স্পর্শ করার উদ্দেশ্যেই হাত বাড়াবেন এবং বল স্পর্শ করবেন। 
  • ইচ্ছাকৃতভাবে হাত অস্বাভাবিক অবস্থায় রাখবেন যাতে বল লেগে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে এবং বল স্পর্শ করবেন। 
  • খেলোয়াড়ের হাতে লেগে গোল হলে। 

এসব কারণে হ্যান্ডবল হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনকি পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে গোলকিপারের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য। 

 

পরোক্ষ (Indirect) ফ্রি কিক 

  • কোনো খেলোয়াড় খুব বিপজ্জনক ভাবে খেললে।
  • স্পর্শ না করেও প্রতিদ্বন্দ্বী দলের খেলোয়াড়কে বাধা প্রদান করলে।
  • গালিগালাজ বা কটুক্তি করলে। 
  • গোলকিপার বল মাঠে ছাড়ার সময় বাধা দিলে বা ছাড়ার আগেই বলে লাথি দেওয়ার চেষ্টা করলে। 
  • নিয়মে উল্লিখিত না থাকলেও এমন কোনো কাজ করলে যাতে খেলা বাধাগ্রস্থ হয়। 
  • গোলকিপার পেনাল্টি এরিয়ার মধ্যে বল ছাড়ার পূর্বে ৬ সেকেন্ডের বেশি ধরে রাখলে। 
  • গোলকিপার একবার বল ছুঁড়ে মারার পর অন্য খেলোয়াড় স্পর্শ করার পূর্বেই আবার হাত দিয়ে ধরে ফেললে।  
  • একই দলের খেলোয়াড় ইচ্ছাকৃতভাবে পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরে গোলকিপারের কাছে বল পাস দিলে। 
  • নিজ দলের কোন খেলোয়াড় থ্রো ইন করার পর সরাসরি তা হাত দিয়ে ধরে ফেললে।

এছাড়াও অন্য যেকোনো কারণে রেফারি উপযুক্ত মনে করলে খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।

১৩) ফ্রি কিক 

পূর্বেই বলেছি, ফ্রি কিক ফুটবলের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ফ্রি কিক কেন করা হয় তা ইতোমধ্যে আপনারা জানেন। লেখার এই অংশে আমরা জানবো ঠিক কী ভাবে ফ্রি কিক করতে হয়। 

সাধারণত যেখানে ফাউল হয়েছে ঠিক সেই স্থানেই ফ্রি কিক করা হয়। তবে কিছু ব্যাতিক্রম রয়েছে। যেমনঃ 

  • আক্রমণকারী দল যদি বিপক্ষ দলের গোল এরিয়ার ভেতর পরোক্ষ ফ্রি কিক পায় তবে গোল এরিয়া নির্ধারণকারী লাইনের কাছ থেকে ফ্রি কিক করে। 
  • প্রতিরক্ষাকারী দল যদি নিজ গোল এরিয়ার ভেতরে পরোক্ষ ফ্রি কিক পায় তবে গোল এরিয়ার যেকোনো স্থান থেকেই তা করা যেতে পারে। 
  • কোনো খেলোয়াড় যদি মাঠে প্রবেশ ও ত্যাগের সময় নিয়ম ভঙ্গ করে তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বী দল একটি পরোক্ষ ফ্রি কিক পায়। সেক্ষেত্রে যেখানে শেষবার বল ছিল সেখান থেকেই খেলা শুরু হয়। 
  • কোনো খেলোয়াড় মাঠের বাইরে কোনো অপরাধ করলে যেখানে অপরাধ করেছে, বল মাঠের ভেতরে রেখে সেই স্থানের যতটা কাছে পারা যায় নিয়ে পরোক্ষ ফ্রি কিক দেওয়া হয়। যদি পেনাল্টি এরিয়ার কাছে (মাঠের বাইরে) প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক দেওয়ার মতো ফাউল ঘটে তাহলে তার শাস্তিস্বরুপ বিপক্ষ দলকে একটি পেনাল্টি শট দেওয়া হয়। 

বল ও খেলোয়াড়ের অবস্থান

  • বল মাটিতে স্থির থাকবে। 
  • বিপরীত দলের প্রত্যেক খেলোয়াড় বল থেকে অন্তত ৯.১৫ মিটার দূরে থাকবে। তবে নিজেদের গোল পোস্টের ভেতরে গোল লাইনে খেলোয়াড়রা অবস্থান নিতে পারে। 
  • ফাউল পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরে হলে বিপরীত দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে নিজস্ব পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে থাকতে হবে। তবে সে সময় ৩ জন খেলোয়াড় মিলে বলের সামনে একটি বাধা তৈরি করতে পারবে। যাকে বলে “Wall’ বা দেওয়াল।

মনে রাখতে হবে যে, শুধু প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক থেকেই সরাসরি গোল করা সম্ভব। পরোক্ষ ফ্রি কিক থেকে গোল হলে তা গোল হিসেবে বিবেচিত হবে না। 

১৪) পেনাল্টি 

আক্রমণকারী দলের খেলোয়াড় যদি প্রতিরক্ষাকারী দলের পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরে থাকা অবস্থায় কোনো ফাউলের শিকার হয় যার কারণে প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক দেওয়া হয়ে থাকে, তবে আক্রমণকারী দল একটি পেনাল্টি পাবে। 

পেনাল্টি শট করার নিয়ম

  • বলটিকে পেনাল্টি মার্কে স্থির থাকতে হবে। 
  • যেই খেলোয়াড় পেনাল্টি শট করবেন তার নাম পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করতে হবে। 
  • পেনাল্টি শট করার সময় বাকি সকল খেলোয়াড়কে অবশ্যই পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে এবং বল থেকে অন্তত ৯.১৫ মিটার দূরে থাকতে হবে। 
  • রেফারি সিগনাল দেওয়ার পরে কিক করতে হবে। বলকে পেছন দিকে কিক করা যাবে না। 
  • বল কিক করার সময় অবধি গোলকিপারকে অবশ্যই গোল লাইনে অবস্থান করতে হবে। 
  • বলটি গোল করলে, নড়া থেমে গেলে অথবা গোল হওয়া সম্ভব না এটি নিশ্চিত হলেই কেবল পেনাল্টি শেষ হয়েছে এই সিদ্ধান্তে আসা যাবে।

১৫) থ্রো ইন

যখন বল মাঠের বাইরে চলে যায় তখন সেই স্থান থেকেই এবার তা মাঠের ভেতরে ছুঁড়ে মারা হয়। একেই বলে থ্রো ইন। থ্রো ইন থেকে কখনো সরাসরি গোল দেওয়া যায় না। বলটি কোনোভাবে সরাসরি প্রতিপক্ষের গোলে ঢুকে গেলে একটা গোল কিক দেওয়া হয়। আর বল নিজের গোলে ঢুকে গেলে কর্নার কিক দেওয়া হয়। 

থ্রো ইন এর নিয়ম

  • যেই খেলোয়াড় থ্রো ইন করবেন তাকে অবশ্যই মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। 
  • দু’টি পা মাঠের দাগের ওপর থাকতে হবে। 
  • দুই হাত মাথার উপরে করে বলটি ছুঁড়ে মারতে হবে। 
  • যেই খেলোয়াড় থ্রো ইন করছেন তিনি অন্য কোনো খেলোয়াড় বল স্পর্শ করার আগে আবার বল স্পর্শ করতে পারবেন না।
  • যেখান থেকে বল ছোঁড়া হবে তার ২ মিটারের মধ্যে কোনো খেলোয়াড় থাকতে পারবে না। 
  • বলটি মাঠের ভেতরে ঢোকার আগেই মাটি স্পর্শ করলে আবার থ্রো ইন করতে হবে।

১৬) গোল কিক 

যখন আক্রমণকারী দলের কোন খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে বল গোল লাইন পার করে মাঠের বাইরে চলে যায় তখন প্রতিরক্ষাকারী দল একটি গোল কিক পায়। গোল কিকের সাহায্যে সরাসরি গোল দেওয়া যায়। যদিও তা প্রায় অসম্ভব। 

গোল কিকের নিয়ম

  • গোল এরিয়ার যেকোনো স্থান থেকে ঐ দলের যেকোনো খেলোয়াড় গোল কিক করতে পারে। 
  • গোল কিক করার সময় অবশ্যই প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়দের পেনাল্টি এরিয়ার বাইরে থাকতে হবে। 
  • বল লাথি লেগে নড়া শুরু করা মাত্রই খেলা শুরু হয়ে যাবে। 
  • বল অন্য কোনো খেলোয়াড় স্পর্শ করার আগেই যদি যেই খেলোয়াড় গোল কিক করেছেন তিনি আবার স্পর্শ করেন তবে বিপরীত দল একটি প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক পাবেন। এই ঘটনা পেনাল্টি এরিয়ার ভেতরে ঘটলে বিপরীত দল পেনাল্টি পাবে। তবে যদি গোল কিক করা খেলোয়াড় খোদ গোলকিপারই হয় তবে পেনাল্টি নয় বরং পরোক্ষ ফ্রি কিক পাবে।

১৭) কর্নার কিক 

যদি প্রতিরক্ষাকারী দল নিজেই নিজেদের গোল লাইন দিয়ে বল বাইরে পাঠিয়ে দেয় তবে বিপক্ষ দল একটি কর্নার কিক পায়। নামের সাথে এটির বেশ মিল রয়েছে। গোল লাইনের দুই কোণে মাঠের ভেতরের দিকে দুটি বৃত্তচাপ আঁকা থাকে। বিপক্ষ দল এখান থেকেই বলকে কিক করে, যাকে বলে কর্নার কিক। 

কর্নার কিক করার নিয়ম

  • গোল পোস্টের যেই পাশ দিয়ে বল মাঠের বাইরে গেছে সে পাশের কর্নার থেকে কর্নার কিক করতে হবে। 
  • বলটি স্থির অবস্থায় থাকতে হবে এবং আক্রমণকারকারী দলের একজন খেলোয়াড় বলটিকে কিক করবেন। 
  • কর্নার থেকে বিপরীত দলের খেলোয়াড়দের অন্ততপক্ষে ৯.১৫ মিটার দূরে থাকতে হবে। 
  • কর্নারের পতাকাবাহী দন্ডটি নড়ানো যাবে না। 
  • কর্নার কিক করার পরে বল অন্য খেলোয়াড় স্পর্শ করার আগেই যদি একই খেলোয়াড় আবারো বল স্পর্শ করেন তবে প্রতিরক্ষাকারী দল একটি প্রত্যক্ষ ফ্রি কিক পায়।

শেষকথা

ফুটবল একটি রোমাঞ্চকর খেলা। কিন্তু ফুটবল খেলা দেখার রোমাঞ্চটা পরিপূর্ণভাবে তখনই অনুভব করবেন যখন আপনি এর নিয়মগুলো জানবেন। এই প্রচন্ড উত্তেজনাকর খেলাটি সঠিকভাবে বুঝে উপভোগ করার মজাই আলাদা। আশা করি আপনারা এই লেখাটি পড়ে ফুটবল খেলার নিয়ম সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন।

নবীনতর পূর্বতন